সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর । class 7 improtant question answer


সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর । class 7 improtant question answer   

দ্বিতীয় অধ্যায়
ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের কয়েকটি ধারা
 খ্রিষ্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক 

ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের কয়েকটি ধারা  খ্রিষ্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক


আমরা ভারতবাসী। ভারতের অন্তর্গত রাজ্য পশ্চিমবাশ্যে আমরা বাস করি। এই অধ্যায় থেকে প্রাচীন বাংলার অন্তর্গত প্রধান বিভাগগুলির সম্বন্ধে জানা যায়। এছাড়াও মনে রাখতে হবে এগুলি প্রায় দেড় হাজার বছর আগের কথা। বাংলার সীমানা প্রধানত তিনটে নদী দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এইসব অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা আগের থেকে অনেক আলাদা ছিল।

প্রাচীন বাংলা:


প্রাচীন বাংলার প্রধান প্রধান বিভাগের ভৌগোলিকতা সম্বন্ধে আমাদের জানতে হবে।এগুলি প্রায় দেড়-দু বছর আগের কথা। ভৌগোলিক বিভাগের সীমানাগুলি সব সময় একরকমের থাকেনা। বঙ্গ নমাটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋকবেদের ঐতরেয় আরণ্যক-এ। এরপর বিভিন্ন মহাকাব্যে বঙ্গ বা বাংলার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন কালিদাসের রঘুবংশম, মহাভারত ও কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ইত্যাদি। বঙ্গ ও সুষ্ম- এই নাম দুটির উল্লেখ রয়েছে কালিদাসের রঘুবংশম কাব্যে। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে ঐতিহাসিক মিনহাজ-উস-সিরাজের লেখাতে উল্লেখ আছে বঙ্গরাজ্যের। আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে ঐতিহাসিক আবুল ফজলের উল্লেখ আছে। আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে ‘সুবা বাংলা’ বলে এই অঞ্চলটিকে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ এই সুবা কথাটির অর্থ হল রাজ্য।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশ দুটি ভাগে ভাগ হয়েছিল। তা হল পাকিস্তান ও ভারত। এরপর পূর্ব পাকিস্তানের নতুন নাম হয় বাংলাদেশ। ষোড়শ, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে ইউরোপীয় পর্যটন ও বণিকরা এদেশে এসেছিলেন। তারপরই এই অঞ্চলের নাম দেওয়া হয়েছিল বেঙ্গশালা। 
প্রাচীন বাংলার সীমানায় প্রধানত ভাগীরথী,পদ্মা ও মেঘনা এই তিনটি নদী দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। প্রাচীন বাংলার প্রধান প্রধান অঞ্চলগুলি হল বরেন্দ্র,বঙ্গাল, সমতট, পুণ্ড্রবর্ধন, হরিকেল, বঙ্গ, রাঢ় ও গৌড় অধিবাসীদের প্রশ্ন অনুযায়ী অনেক জায়গার নাম রাখা হত। এছাড়া গৌড়, পুণ্ড্র ও বঙ্গ—এই নামগুলো হল এক-একটি জনগোষ্ঠীর।


‌করতোয়া ও ভাগীরথী নদীর মধ্যের এলাকা বরেন্দ্র নামে পরিচিত। সাধারণভাবে কোনো অঞ্চলে যে ধরনের অধিবাসী বসবাস করত, তাদের নাম অনুসারে ওই অঞ্চলের নামকরণ করা হত। বরেন্দ্র হল একটি জনগোষ্ঠীর নাম।

বঙ্গাল অ্যলটি বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলটিকে বোঝানো হত। এই অঞ্চলটি বঙ্গের দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত। যদিও প্রাচীন বাংলার সীমানা ভাগীরথী, পদ্মা ও মেঘনা নিয়ে তৈরি হয়েছিল, কিন্তু এই উল্লেখিত অঞ্চলটি বঙ্গোপসাগরবর্তী অঞ্চলকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল। ‌সমতটকে সাধারণত প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে সীমান্তবর্তী এলাকা বলে ধরা হত। এই অঞ্চলটি ছিল প্রাচীন মেঘনার পূর্বদিকের অঞ্চল। বর্তমানে যা বাংলাদেশের কুমিল্লা, নোয়াখালি সমভূমি অঞ্চল নামে পরিচিত। মেঘনা নদী সমতট অঞ্চলকে বাংলার বাকি অঞ্চলের থেকে আলাদা করে রেখেছিল। ‌পুণ্ড্রবর্ধন ছিল প্রাচীন বাংলায় বিভক্ত সমস্ত অঞ্চলগুলির মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম অঞ্চল। এই অঞ্চলটির সীমানা দীর্ঘ অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এই অঞ্চলটির মধ্যে সম্পূর্ণ পশ্চিমবঙ্গ এছাড়াও বাংলাদেশের কিছু অংশ যেমন দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহি এবং পাবনা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। শ্রীহট্ট (যার পূর্ব নাম ছিল সিলেট) এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। গুপ্তযুগে পুণ্ড্রবর্ধন ছিল একটি ‘ভুক্তি' বা শাসন এলাকা। গুপ্ত যুগের প্রধান সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজত্বকালে এই অঞ্চলটি তার শাসনভুক্ত এলাকার অধীনে ছিল। ‌সমতট অঞ্চলের দক্ষিণ পূর্বদিকের অঞ্চল হরিকেল নামে পরিচিত। বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রামের 


উপকূল অঞ্চলই পূর্বে হরিকেল নামে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কালে চট্টগ্রাম একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। চট্টগ্রামের নেতা মাস্টার দা, স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উল্লেখযোগ্য নেতা।

‌প্রাচীনকালে ভাগীরথী ও পদ্মা নদীর মধ্যবর্তী ত্রিভুজাকার অঞ্চল বঙ্গ নামে পরিচিত ছিল। সম্ভবত ভাগীরথী নদীর পশ্চিম দিকের এলাকাও এর মধ্যে ছিল। পরবর্তীকালে নদীর গতিপথের পরিবর্তনের জন্য পদ্মা ও ভাগীরথীর পশ্চিমদিকে রাঢ় এবং সুস্থ নামে দুটো আলাদা অঞ্চলের উৎপত্তি ঘটলে বাচ্চার সীমানা পাল্টে যায়। বাদবাকি অঞ্চল বঙ্গ নামে পরিচিত থাকে। বা বলতে বাংলাদেশের অন্য, বিক্রমপুর, ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলকে বোঝানো হয়। এই বঙ্গ নামটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় রে ঐতরেয় আরণ্যক কাব্যগ্রন্থে।প্রাচীন বাংলার বঙ্গের উল্লেখ মহাভারতে, কৌটিলোর অর্থশাস্ত্রেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়।

‌প্রাচীন রাঢ় অঞ্চলটি আরেকটি নাম ছিল। এটি কোথাও কোথাও লয় নামেও পরিচিত ছিল। এটির দুটি ভাগ ছিল। উত্তর রাঢ় ও দক্ষিণ রাঢ়। উত্তর ও দক্ষিণ রাঢ়ের মধ্যবর্তী অঞ্চলে ছিল অজয় নদী। বর্তমানে মুর্শিদাবাদের পশ্চিম অংশ, বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমার উত্তর ভাগ, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমানের বাকি অংশ বীরভূম মেলা, সাওতাল পরগনার একটি অংশ, অজয় দামোদর নদীর মধ্যবর্তী বিরাট অংশও রাঢ় অঞ্চল নামে পরিচিত ছিল। এই অঞ্চলের নাম রাঢ় ছিল বলে, এই অঞ্চলের উপভাষা রাঢ়ী উপভাষা নামে পরিচিত ছিল। জৈনদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনুযায়ী উত্তরের রাঢ় অঞ্চল ছিল বঙ্গভূমি বা ছবির গাঢ় অঞ্চল ছিল সুবভ্ভূমি মহাভারতের গল্পে এবং কালিদাসের কলব্যেও এই অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায়।


‌প্রাচীনকালের গৌড় হল একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। বর্তমানের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম এবং বর্ধমান জেলার পশ্চিমভাগ নিয়ে গৌঢ় অঞ্চল গঠিত। বর্তমানে মুর্শিদাবানই ছিল তখনকার গৌড়ের প্রধান এলাকা। শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ যেটি গৌড়ের অন্তর্গত। গৌড় বলতে একটি জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হত। অষ্টম-নবম শতকে গৌড় বলতে সমগ্র পাল সাম্রাজ্যকে বোঝানো হত।  শশাঙ্কের রাজত্বকালে পুন্ড্রবর্ধন থেকে ওড়িশা পর্যন্ত ছিল গৌড়।

শশাঙ্ক: 

গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পরে গুপ্ত নামধারী রাজাগণ গৌড় -এ স্বাধীনভাবে রাজত্ব করছেন। উত্তরবঙ্গ ও পশ্চিমবশের কিছু অংশ নিয়ে গৌড় ফলপপ গঠিত ছিল। গুপ্তরাজ বৈশাগুপ্তের মৃত্যুর পর থেকে গৌড় দখল করার চেষ্টা করেন কনৌজের মৌবই বাজাণ। এই কারণে গুপ্তদের সাথে মৌপতীদের যুদ্ধ চলতেই থাকে। একই সাথে চালুক্য বংশীয় রাজারাও গুপ্তদের আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। ফলে গুপ্তদের দুর্বলতার সুযোগে মহাসেন গুপ্তের জনৈক সামন্তরাজা শশাঙ্ক গৌড় দখল করে এক স্বাধীন গৌড় প্রতিষ্ঠা করেন। ০৬-০৭'খ্রিস্টাব্দের কিছুকাল আগে তিনি গৌড়ের শাসক হন। ৬৩৭-'৩৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত শশাঙ্ক গৌড়ের স্বাধীন শাসক ছিলেন।


বংশ পরিচয়: শশাঙ্ক এর বংশ পরিচয় সম্পর্কে সঠিক কিছু না হয় না। অনেকের মতে, তিনি গৌড়ের পূর্ববর্তী রাজা জয়নাগের বংশধর। অনেকের মতে তিনি গুপ্তবংশীয় শাসক আবার বেশির ভাগ পন্ডিতের মতানুযায়ী তিনি গুপ্তরাজা মহাসেনগুপ্তের সামন্ত। তিনি গুপ্ত বংশের দুর্বলতার সুযোগে গৌড় রাজ্যের সুচন করেন। শশাঙ্কের কিছু স্বর্ণমুদ্রায় 'নরেন্দ্র গুপ্ত' ও 'বিক্রমাদিত্য' নামও জানা যায়।

রাজ্যবিস্তার : শশাঙ্কের রাজধানী ছিল কর্ণসুবন। তিনি প্রথমে দন্ডভুক্তি (মেদিনীপুর), মগধ বুদ্ধগয়া অঞ্চল এবং ওড়িশার একাংশ নিজের অধিকারভূক্ত করেন। থলে থেকে পশ্চিম বরানসী পর্যন্ত রাজ্যের সীমানা বিস্তৃত হয়। তিনি উৎকলল (উড়িয়া) ও গঞ্জাম জেলা জয় করে মহেন্দ্র পর্বত পর্যন্ত রাজ্যবিস্তার করেন। অনেকের মতানুযায়ী তিনি মগধ ও স্বাধীন বঙ্গ রাজ্যও হার করেছিলেন। 

পূর্ব ভারতের পর পশ্চিম ভারতে পশ্চিমে বলৌহ রাজ্যের মৌখরীরা ছিল গৌড়ের শত্রু। থানেশ্বরের প্রভাকর বর্ধনের কন্যা রাজশ্রীর সঙ্গে কনৌজের মৌখরীরাজ গ্রহবর্মনের বিবাহ হওয়ার ফলে উভয়দেশে মৈত্রী জোট গড়ে ওঠে। তখন শশাঙ্ক থানেশ্বরের শত্রু মলিবরাজ সেনগুপ্তের সাথে পাল্টা মৈত্রী জোট গঠন করেন।

 ধর্মমত : শশাঙ্ক ছিলেন শৈৰ উপাসক। তাকে বৌদ্ধ বিদ্বেষী বলা হয়। 'আর্যমঞ্জু শ্রীমূলকল্প' নামক বৌদ্ধগ্ৰন্থে তাকে বৌদ্ধ বিদ্বেষী বলা হয়। কিন্তু এই তথ্য সত্য নয়। কারণ হিউয়েন সাং-ই তৎকালীন গৌড়ে বহু বৌদ্ধমঠ ও বৌদ্ধশ্রমকে নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করতে দেখেছিলেন।

শশাঙ্কের সাথে সংঘর্ষ : জোট গঠনের পর শশঙ্ক ও দেবগুপ্ত কনৌজ আক্রমণ করে গ্রহবর্মনকে হত্যা করেন ও রাজশ্রীকে বন্দী করেন। সঙ্গে সঙ্গে থানেশ্বররাজ রাজ্যবর্ধন মালব আক্রমণ করে এবং দেবগুপ্তকে হত্যা করেন। এরপর শশাঙ্ক মালবে পৌঁছে রাজ্যবর্ধনকে হত্যা করেন। রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর পর হর্ষবর্ধন থানেশ্বর ও কনৌজের রাজা হন। শশাঙ্কের ক্রমবর্ধমান শক্তিতে শঙ্কিত হয়ে হর্ষবর্ধন ও ভাস্করবর্মণ একত্রে মৈত্রতা স্হাপন করেন। পরবর্তীকালে, জানা যায় শশাঙ্ক জীবিত থাকাকালীন হর্ষ তার রাজ্য দখল করতে পারেনি। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর হর্ষবর্ধন ও ভাস্করবর্মণ বাংলাদেশ ভাগ করে নেন।

 শশাঙ্কের কৃতিত্ব: (i) শশাঙ্কের যে রাজতন্ত্র গড়ে উঠেছিল তাকে বলা যায় গৌড়তন্ত্র। ওই সময়ে গৌড় রাজ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে সরকার পরিচালনা করা হত। (ii) শশাঙ্ককে 'বৌদ্ধ বিদ্বেষী' বলা হলেও, তার সময়কালে কর্ণসুবর্ণ নগরের মধ্যে বৌদ্ধ বিহারের সমৃদ্ধি হয়েছিল বলে জানা যায়। এ ছাড়াও চিনা পর্যটক ই-ৎসিঙ-এর রচনাতেও বৌদ্ধধর্মের উন্নতির কথা পাওয়া যায়। (iii) শশাঙ্কের আমলে সোনার মুদ্রা প্রচলিত হয় বলে, সোনার মূল্য কমে গিয়েছিল। সোনার মুদ্রা অনেক সময় নকলও হত। (iv) রুপোর মুদ্রাও দেখা যায় নি। এই সময় আমলাতন্ত্রের প্রাধান্য স্বীকৃতি পায়। (v) বাণিজ্যের গুরুত্ব কমার ফলে নগরও গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। (vi) শশাঙ্ক কোনো স্থায়ী রাজবংশ তৈরি করতে পারেনি ফলে, তার মৃত্যুর পরেই কুষাণ বংশ অবলুপ্তির পথে এগিয়ে যায়। এইভাবে, শশাঙ্ক বাংলাদেশে এক সার্বভৌম রাজ্য ও সুশাসন প্রবর্তন করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। পাল বংশ পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল। এঁদের আদি নিবাস ছিল সম্ভবত বরেন্দ্র অঞ্চলে। প্রথমে রাজ্যবিস্তারের শুরুর দিকে পালরাজাদের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীকালে প্রভাব কমে গেলেও শেষের দিকে পুনরায় বৃদ্ধি পায়।


ধর্মপাল


গোপালের মৃত্যুর পর আনুমানিক ৭৭০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পুত্র ধর্মপাল বাংলার সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন সূক্ষ যোদ্ধা ও কূটনীতিজ্ঞ। ক্ষুদ্র পাল রাজ্যকে তিনি সাম্রান্সের মর্যাদায় উন্নীত করেন। বিজেতা হিসেবে তিনি সমগ্র আর্যাবর্তে সার্বভৌম ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষী ছিলেন।


(১) রাজ্য বিস্তার : সিংহাসনে বসার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি প্রয়াগ, মগধ, বারাণসী জয় করেন। কনৌজের অধিকার নিয়ে প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূটদের সঙ্গে ধর্মপাল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ত্রিশক্তি সংগ্রাম প্রায় দুশ বছর ব্যাপী চলতে থাকে। ধর্মপাল অনেকের সঙ্গে সংঘর্ষে বাহত হয়ে, বিনা বাধায় ইন্দ্রাযুষকে পরাজিত করে চক্রায়ুধকে নিজের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সিংহাসনের দায়িত্বভার দেন। এই উপলক্ষে ভোজ, মৎস, মদ্র, অবন্তী, গান্ধার,কুবু প্রভৃতির রাজ্যের রাজারা উপস্থিত ছিলেন। এবং সব রাজ্য ধর্মপালের প্রাধান্য স্বীকার করে নিয়েছিল। এছাড়া ধর্মপাল নেপালও জয় করেছিলেন বলে অনেক পণ্ডিতদের অনুমান।

 (২) শিল্প সাহিত্যের পৃষ্টপোষকতা : কেবল রাজ্যবিস্তারই নয়, তিনি শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তিনি 'বিক্রমবিহার' নামে একটি বৌদ্ধ মঠ মগধে স্থাপন করেন। তিনি বৌধধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বলেই জানা যায়। এ ছাড়াও তিনি 'বিক্রমশীল' নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি এটিকে বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি আরও ৫০টি বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্র নির্মাণ করেছিলেন বলে অনুমান করা হয়। 'সোমপুরী বিহার’ এবং ‘ওদন্তপুর বিহার’ দুটি তার অন্যন্য কীর্তি। তার মৃত্যুর পর বাংলার সিংহাসনে বসেন তার পুত্র দেবপাল। 

দেবপাল


দেবপাল : দেবপাল ছিলেন পাল বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তিনি তার পিতার তুলনায় অধিক সুদক্ষ, সেনা ও সুশাসক, প্রজাপালক ছিলেন। তিনি তার পিতার সমস্ত সাম্রাজ্যকে আর্যাবর্ত পর্যন্ত বিস্তৃত করেন।

 (১) রাজ্যবিস্তার : তিনি প্রথমে উড়িষ্যাকে আক্রমণ করেন এবং নিজ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। শোনা যায় তিনি রাষ্ট্রকুট ও প্রতিহারদের পরাজিত করে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি হুনদেরও পরাজিত করে বলে জানা যায়। এইভাবে তার সাম্রাজ্য উত্তরে হিমালয় পর্বত থেকে দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বত এবং পূর্ব ও পশ্চিমে সমুদ্রের মধ্যবর্তী অঞ্চল সমস্তই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

(২) কৃতিত্ব। তিনি যেমন ভারতে সুদক্ষ সুশাসক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তেমনই ভারতের বাইরেও সম্মান ও ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছিলেন। বাজপুত্রনের নালন্দা বিহারে একটি মঠ প্রতিষ্ঠার জন্য তার অনুমতি চাইলে, তিনি পাঁচটি গ্রাম প্রদান করেন এবং সেই সময়কার পণ্ডিতদের থেকে তার সুদক্ষ সেনা ও বিশাল সেনাবাহিনীর কথাও শোনা যায়। 

প্রথম ও দ্বিতীয় মহীপাল


 প্রথম ও দ্বিতীয় মহীপাল: দেবপালের মৃত্যুর পর পালবংশের ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। পালসের নিজের মধ্যে অভ্যন্তরীণ গোলযোগের সুযোগে বিভিন্ন রাজলরা পুনরায় রাজ্যের অর্ধেক অংশ নিজেদের অধীনস্থা করে নেয়। ফলে মগধ অঞ্চল অধীনস্থ হয়ে যায়। কিন্তু রাজা প্রথম মহীপালের সময় হারানো গৌরব কিছুটা ফিরলেও,রাজা দ্বিতীয় মহীপালের সময়কালে, অনৈক দিক এর নেতৃত্ব বরেন্দ্র আসে এক বিদ্রোহ ঘটে যা কৈবর্ত বিদ্রোহ নামে পরিচিত। 

রামপাল


রামপাল: সামন্তদের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলতার সুযোগে রামপাল কারাগার থেকে পালিয়ে যায়। তারা মগধে গিয়ে পাল শাসনের সূচনা করেন। প্রথমে সিংহাসনের অধিকারী হন নূরপাল। পরে হয় রামপাল 

 রাজ্য বিস্তার : রামপল সর্বপ্রথমে বরেন্দ্র পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। তিনি ভীমকে হত্যা করে, বরেন্দ্র উদ্ধার করেন ও সেখানে রমাবর্তী নগরী প্রতিষ্ঠা করে রাজধানী স্থাপন করেন। রামপুল খণ্ড খণ্ড রাজা উদ্ধারের কাজের উদ্যোগী হন। বিক্রমপুর কামরূপ দখলের পর, উড়িষ্যার বিষ তার অধীনস্থ হয়। এরপর চোলরাজ কুতুঙ্গেনের সাথেও তার দুগ্ধ হয় এবং তার আমলেই মিথিলা পাল রাজ্যচ্যুত হয়। 

 কৃতিত্ব: অনেক কষ্টে নিল মন বলে, নির্বাসনের জীবন কাটিয়ে তিনি রাজ্য জয় করতে সক্ষম হয়।খণ্ড-বিখণ্ড ভাবে দীর্ঘ সাম্রাজ্যের অধিকাংশ অংশ জয় করতে সক্ষম হন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর পাল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। 


কৈবর্ত বিদ্রোহ

 কৈবর্ত বিদ্রোহ - তৃতীয় নিগ্রহ, পালের রাজত্বকালে নানা দিয়ে বিশৃঙ্খলায় পাল মানাজোর ভাঙন ধরতে শুরু করে। বৈদেশিক শক্তির প্রশাসন ভেঙে পড়ে। সেই সুযোগে সামন্ত রাজা রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে। তাঁর মৃত্যুর পর উত্তর উত্তর ভাগে বিশাল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠতে থাকে দ্বিতীয় মহীপালের কর্মচারী দিবা ছিলেন এই বিদ্রোহের নেতা। তিনি পালেদের দুর্বলতার সুযোগে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে,মহীপাল বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে নিহত হন। রামপাল, মন্ত্রীদের ছোটো ভাই, দিব্যকে হত্যা করে, বরেন্দ্র পুনরুদ্ধার করে এবং তিনি ভীমকে পরাজিত করো, কামরূপ ভরিশ্যাও জয় করেন। রমাবর্তী নগরীতে তার রাজধানী স্থাপিত হয়। এই বিদ্রোহই রামচরিত কাব্যে কৈবর্ত বিদ্রোহ নামে পরিচিত।


  ত্রি-শক্তি সংগ্রাম


  ত্রি-শক্তি সংগ্রাম : প্রাচীন ভারতের ত্রিশক্তি সংগ্রামের তিনটি শক্তি হল- বাংলার পাল পশ্চিম ভারতের গুর্জর-প্রতিহার ও দক্ষিণ ভারতের রাষ্ট্রকূট শক্তি। এই তিনটি শক্তি প্রায় দুশো বছর ব্যাপি কৌনজ দখলকে কেন্দ্র করে সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল ত্রিশক্তি সংগ্রাম নামে পরিচিত।

 বাংলাদেশে পালরাজ্য ধর্মপাল প্রতিষ্ঠা করেন কিন্তু তিনি প্রতিহার রাজ বংশের কাছে পরাজিত হন।  প্রতিহার রাজ্যের ক্ষমতা বুদ্ধিবলে, রাষ্ট্রকূটরাজ ধ্রুব উত্তর ভারত অভিযান করছে, তিনি বৎসকে পরাজিত করেন ও ধর্মণল লাভবান হন। ধ্রুব কনৌজ দখলের পরই পশ্চিম ভারত এবং এই সুযোগে খুব হচ্ছে ধর্মপাল কনৌজ দখল করেন। তিনি চক্রায়ুধকে সিংহাসনে বসান। কিন্তু ধর্ম তা বজায় রাখতে পারে নি।  শেষ দিকে কনৌজেকে কেন্দ্র করে পুনরায় ত্রিশক্তি সংঘর্ষ হয়। দ্বিতীয় নাগভট্টের নেতৃত্বে প্রতিহার পুনরায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং ধর্মপাল নাগভট্টের কাছে পরাজিত হয়। কিন্তু নাগভট্ট দীর্ঘস্থায়ী বিজয় ধরে রাখতে সক্ষম হয়নি। তারপরেই রাষ্ট্রকূট রাজা তৃতীয় গোবিন্দ উত্তর দিকে অভিযান চালায় এবং নাগভট্টকে পরাজিত করে। এই সংঘর্ষের ফল ছিল সুদেরী। এর ফলে সমস্ত শক্তিরই ক্ষতি হয়েছিল। দীর্ঘদিন যুদ্ধ চলার ফলে প্রত্যেকেরই সৈন্য ও অর্ধনা ঘটেছিল। যুদ্ধের বিপুল খরচ জোগাড়ের জন্য জনগণের উপর করের বোঝা বাড়তে থাকে। এবং এই তিন শক্তির সুযোগে সমস্ত রাজারা ক্ষমতালোভী হয়ে উঠতে থাকে। সেন বংশ সেন রাজাদের পূর্বপুরুষের দক্ষিণ ভারত থেকে এসেছেন বলে অনুমান করা হয়। সেন রাজাদের লিপিতে তারা নিজেদের ব্রাম্ম ক্ষত্রিয় বলে উল্লেখ করেছেন, আবার কেউ উনের চন্দ্র রায় বলেন। কর্মটিকের চালুক্যরা যখন আক্রমণ করেন, তখন তাদের সেনাবাহিনী হয়ে সৈনারা প্রথম বাংলায় আসেন। পরে, পাল বংশের দুর্বলতার সুযোগে বাংলায় স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

সামন্ত সেন ছিলেন সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতার পুত্র হেমন্ত সেন রাঢ় অঞ্চলের বিস্তার করে। তার পুত্র। বিজয় সেন বাংলায় স্বাধীন সাম্রাজ্য বিস্তার করে। বিজয় সেন (আনুমানিক ১০৯৬–১১৫৯ খ্রিঃ) : রামপালের মৃত্যুর পর বিজয় সেন পাল বংশের দুর্বলতার সুযোকে নিজের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্ব ও দক্ষিণ কলিতার কিছু অংশ পূর্বে অসমের কিছু অংশ তিনি তার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। বিজয় সেনের নেতৃত্বে বাংলায় অনেকদিন পর ভালো দিনের সূচনা হয় এবং বাংলায় দীর্ঘ ৬০ বছরের শান্তি ও সমৃদ্ধির সূচনা হয়। (২) বল্লাল সেন : বিজয় সেনের মৃত্যুর পর তার পুত্র বল্লাল সেন বাংলার সিংহাসনে বসেন। তিনি মগধ, মিথিলা, চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুর জেলায় কিয়দংশ, তার সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। তিনি কেবল সুযোদ্ধা নয়,সাহিত্য ও সংস্কৃতিরও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি 'দান-সাগর' 'অদ্ভুত সাগর' নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থ দুটিতে তিনি হিন্দু আচার ও ক্রিয়াকর্মের বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি প্রথম কৈলিন্য প্রথার প্রবর্তন করেন। তবে এই প্রথার প্রবর্তন অনেকের মতে তিনি রাজনৈতিক কারণে করেছিলেন। তা হলেও এই প্রথা প্রবর্তনের মাধ্যমে তিনি তার রক্ষণশীল মানসিকতার পরিচয় দেন। তিনি হিন্দু ধর্মের পৃষ্টপোষক ছিলেন, বেল ও স্মৃতিশাস্ত্রেও তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল। শেষে লক্ষ্মণ সেনের হাতে দায়িত্বভার দিয়ে, তিনি গঙ্গাতীরে শাস্ত্রচর্চায় জীবন অতিবাহিত করেন। (৩) লক্ষ্মণ সেন : পিতার ন্যায় লক্ষ্মণ সেনও ছিলেন সুদক্ষ যোদ্ধা ও সংস্কৃতি বিভাগের পুরুষ। তিনি গৌড়, কামরুপ, কাশী ও কলিঙ্কা নিজ রাজ্যভুক্ত করেন। পুরী, এলাহাবাদ ও বারানসীতে তিনি বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করেন। তার নামানুসারে গৌড়ের নতুন নাম হয় 'লক্ষ্মণাবতী'। তিনি ‘গৌড়েশ্বর’, ‘অরি-রাত-মদন-শঙ্কর’ ‘পরম-বৈষ্নব' প্রভৃতি উপাধি পান। তিনিও সংস্কৃতি অনুরাগী ছিলেন। তিনি পিতার 'অদ্ভুত সগর' নামক অসমাপ্ত গ্রন্থ সমাপ্ত করেন। লক্ষ্মণ সেনের মৃত্যুর পর তাঁর দুই পুত্র বিশ্বরূপ সেন ও কেশব সেন দক্ষিণ ও পূর্ববঙ্গে কিছুকাল শাসন করেন।কিন্তু তাদের থেকে সেন বংশের অবসান হয়। এরা কৈলিনা প্রথা প্রবর্তনের ফলে, দেশের অভ্যন্তরে গোলযোগের সৃষ্টি হয়। মুসলমানদের আক্রমণ প্রতিরোধ করার চেষ্টাও সেন রাজাদের ছিলনা, ফলে বিশ্বযুদ্ধেই বাংলা মুসলমানদের হাতে তুলে দেন এবং শেষে এটি মুসলমান অধিকার ভুক্ত হয় এবং সেন শাসনের অবসান ঘটে। চোল শক্তি চোলরাজ বংশের প্রসার প্রদক্ষিণ ভারতে সুদৃঢ়প্রসারী শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্যের ক্ষেত্রেও চোল রাজাদের অবদান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কাবেরী এবং তার শাখানদীগুলির ব-দ্বীপকে ঘিরে চোল শাসনের সূচনা হয়। চের, পাণ্ড্য ও পল্লবদের ক্রমাগত অক্রমকে খুব কম সময়ে প্রায় এক শতকের মধ্যেই এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। বিজয়লাল এর মাধ্যমে চোল বংশের পুনরুত্থান ঘটলেও, চোল বংশের আধিপত্য চালু হয় পারন্তুকের আমল থেকে। তবে মাঝে চোলবংশ দুর্বল হলেও প্রথম রাজরাজের আমলে চোলবংশ পুনরায় তার গৌরব ফিরে পায়।
• প্রথম রাজ রাজ

প্রথম রাজরাজ ছিলেন চোল বংশের অন্যতম কারণ। তাঁর সমস্ত সামরিক অভিযানের তথ্য পাওয়া যায় তাঙ্গোর লিপি' থেকে। সর্বপ্রথম রাজরাজ চেরগণকে পরাজিত করেন। পাণ্ড্যদের পরাজিত করে, তিনি মাদুরা দখল করে, তার অন্যতম কীর্তি শক্তিশালী চোল নৌ-বাহিনীর প্রতিষ্ঠা। তিনি তাঁর রাজধানী সিংহলে স্থাপন করেন। তিনি প্রাচীন দ্বাদশ সহস্র দ্বীপপুঞ্জে নৌ-অভিযান প্রেরণ করেন যা বর্তমানে মালদ্বীপ ও লাক্ষাদ্বীপ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি শৈব উপাসক হলেও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অথবা ধর্মের প্রতি গভীর শ্রাদ্ধানুরাগী ছিলেন। তিনি তাখোরে সুবিখ্যাত রাজরাজেশ্বরের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। • প্রথম রাজেন্দ্র ঢোল (১০১৬–৪৪ খ্রিঃ) প্রথম রাজরাজের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র প্রথম রাজেন্দ্র ঢোল সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন চোল বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা। মহেন্দ্রগিরি এবং কন্যাকুমারী এখলে প্রাগুলিপি থেকে তাঁর কীর্তির কথা জানা যায়। প্রথম রাজেন্দ্র চোল পাণ্ড্য ও চের রাজ্য দুটিকে তার সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। চালুক্যদের পরাজিত করেন, দক্ষিণ ভারত সম্পূর্ণ বিজয় করেন। তিনি বাংলাদেশ আক্রমণ করেন, তার নিকট মহীপাল, রণশুর, গোবিন্দচন্দ্র পরাজিত হন। বঙ্গবিজয় করার পর তিনি 'গঙ্গাইকোন্ড চোল' উপাধি গ্রহণ করেন। এই নামানুসারে, কাবেরী নদীর তীরে তার রাজধানী স্থাপিত হয় এবং তার নাম হল গঙ্গাইকোল্ড চোলপুরম্। তাঁর কৃতিত্ব হল শৈলেন্দ্র সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে নৌ-বিজয়। শৈলেন্দ্র সাম্রাজ্য শ্রীবিজয় নামেও পরিচিত ছিল। শৈলেন্দ্ররাজ তুষ্পবর্মণ তাঁর নিকট পরাজিত হয়ে, তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন।চালুক্যের সাথে এক যুদ্ধ চলাকালীন প্রথম রাজেন্দ্র চোলের মৃত্যু ঘটে। • পরবর্তী রাজাগণ : প্রথম রাজেন্দ্রের মৃত্যুর পর চোল সাম্রাজ্য ক্রমে ক্রমে অবনতির স্তরে পৌঁছাতে চালু করে। তাঁর পুত্র প্রথম রাজাধিরাজ চালুক্য, পাণ্ড্য ও চের রাজ্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। সিংহলের বিরুদ্ধেও তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করেন। রাজাবিরাজের পরবর্তী রাজা হলেন বীর রাজেন্দ্র (১০৪৬–০৭ খ্রিঃ)। চোল-নৃপতি কুলোতুঙ্গের রাজত্বকালে চোলদের সঙ্গে সংঘর্ষ কিছুটা কমলেও, পরবর্তী শাসকদের সময় চোল-চালুক্য, সংঘর্ষ আরও বৃদ্ধি পায়। ইতিমধ্যে যাদব ও কাকতীয় বংশের আক্রমণের ফলে চোলবংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়।


১. শূন্যস্থান পূরণ করোঃ
(ক) বঙ্গ নামের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়- -(ঐতরের ভারণ্যক / আইন-ই-আকবরি / অর্থশাস্ত্র) গ্রন্থে।
উঃ অর্থশাস্ত্র।
(খ) প্রাচীন বাংলার সীমানা তৈরি হয়েছিল__, __ এবং ___ (ভাগীরথী, পদ্মা, মেঘনা /গঙ্গা, ব্রক্ষ্মপুত্র, সিন্ধু / কুয়া, কাবেরী, গোদাবরী) নদী দিয়ে।
উঃ ভাগীরথী, পদ্মা, মেঘনা।
(গ) সকলোত্তরপথনাথ উপাধি ছিল ___ (শশাঙ্কের / হর্ষবর্ধনের / ধর্মপালের)।
উঃ হর্ষবর্ধনের।
(ঘ) কৈবর্ত বিদ্রোহের একজন নেতা ছিল ____ (ভৗম / রামপাল / প্রথম মহীপাল)।
উঃ ভীম।
(ঙ) সেন রাজা ___ আমলে বাংলায় তুর্কি আক্রমণ ঘটে। (বিজয় সেনের / বল্লাল সেনের / লক্ষ্মণ সেনের)।
উঃ লক্ষ্মণ সেনের।
৩. সংক্ষেপে (৩০-৩৫টি শব্দের মধ্যে) উত্তর লেখোঃ পূর্ণমান- ৩ (ক) এখনকার পশ্চিমবঙ্গের একটি মানচিত্র দেখো। তাতে আদি মধ্য যুগের বাংলার কোন্ কোন্ নদী দেখতে পাবে?
প্রাচীনকালের নদী বলতে আমরা প্রথমেই দেখতে পাব পদ্মা ও অগীরথী নদী।
(খ) শশাঙ্কের আমলে বাংলার অর্থনীতি কেমন ছিল তা লেখো। উঃ শশাঙ্কের আমলে বাংলার অর্থনীতির ক্ষেত্রে অর্থাৎ ব্যাবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই সময় মন্দা দেখা দিয়েছিল। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মুদ্রা হিসেবে সোনার মুদ্রা প্রচলন ছিল, রুপোর মুদ্রাও প্রচলন ছিল ফলে আন্তর্জাতির বাজারে সোনার মান পড়ে যায়। ফলে, সম্পূর্ণ অর্থনীতি হয়ে পড়ে কৃষিনির্ভর। বাণিজ্যের গুরুত্ব কমার সঙ্গে সঙ্গে নগরের গুরুত্বও কমতে শুরু করে। আবার কৃষির গুরুত্ব বাড়ার ফলে, সমস্ত সমাজ হয়ে পড়ে গ্রামকেন্দ্রিক। সমাজের স্থানীয় প্রধানদের ক্ষমতা বেড়ে যায় কারণ বণিকদের ক্ষমতা আগের থেকে কমে যায়। (গ) মাৎস্যন্যায় কী? উঃ মাৎস্যন্যায় বলতে, দেশের অভ্যন্তরীণ গোলযোগ ও স্থায়ী রাজার অভাবকে বোঝানো হয়। মাৎস্যন্যায় শব্দের অর্থ হল পুকুরের বড়ো মাছেরা ছোটো মাছেদের তাদের দুর্বলতার সুযোগে গ্রাস করে। ফলে ছোটো মাছদের অস্তিত্ব বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে। তেমনি রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বিভিন্ন বাহ্যিক শক্তি অভ্যন্তরীণ গোলযোগের সুযোগে বারবার আক্রমণ করে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ গোলযোগের ক্ষেত্রেও, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও নানান সম্ভ্রান্ত লোক অর্থাৎ এককথায় বিভিন্ন উপজাতির লোকেরা নিজেদের ক্ষমতার সুযোগে অন্যদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলে। একেই ইতিহাসে 'মাৎস্যন্যায় বলে মনে করা হয়। (ঘ) খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টম শতকের আঞ্চলিক রাজ্যগুলো কেমনভাবে গড়ে উঠেছিল? উঃ সপ্তম ও অষ্টম শতকে রাজ্যের আঞ্চলির শক্তিগুলির প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। ধীরে ধীরে এই আঞ্চলিক শক্তিগুলি তাদের নির্দিষ্ট অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য ও ক্ষমতা বিস্তার করতে শুরু করে। ফলে নতুন রাজারা এই স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রভাব মেনে নেয় এবং এই আঞ্চলিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাজাদের থেকে উপঢৌকনও পেত।এই রাজাদের যুদ্ধের সময় এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজের যুদ্ধের দল নিয়ে যুদ্ধেও উপস্থিত হত। এবং এরা সকলে আঞ্চলিক বা রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে কখনো বা রাজ্যও নিজের অধিকারভুক্ত করত। (ঙ) সেন রাজাদের আদি নিবাস কোথায় ছিল? কীভাবে তারা বাংলার শাসন কায়েম করেছিলেন? উঃ সেন রাজাদের আদি নিবাস ছিল দক্ষিণ ভারতের মহীশুর ও তার আশেপাশের বিস্তৃত বিস্তৃর্ণ এলাকা। তারা বাংলায় পালের রাজত্বের শেষের দিকে শাসন করা শুরু করে। সেনদের দুর্বলতার সুযোগে বালিরাজা সামস্তসেন, হেমন্ত সেন, বল্লাল সেন ও লক্ষ্মণ সেন বাংলায় শাসন চালু করে এবং দীর্ঘদিন রাজত্ব করে। ৪. বিশদে (১০০-১২০টি শব্দের মধ্যে) উত্তর লেখো: (ক) প্রাচীন বাংলার রাঢ় সূক্ষ্ম এবং গৌঢ় অঞ্চলের ভৌগোলিক পরিচয় দাও। উঃ রাঢ় সুম্ম : প্রাচীন রাঢ় অঞ্চল দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। একটি উত্তর রাঢ় এবং অন্যটি হল দক্ষিণ রাঢ়। উত্তর রাঢ়টি বঙ্গভূমি এবং দক্ষিণ রাঢ় সুত্তভূমি নামে পরিচিত ছিল। উত্তর রাঢ় ও দক্ষিণ রাঢ়ের মাঝের নদীটি অজয় নদী নামে পরিচিত ছিল। উত্তর রাঢ় অঞ্চলের মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলার পশ্চিম অংশ, সাঁওতাল পরগনার একাংশ, বীরভূম জেলা, বর্ধমান জেলার কিছু অংশ (কাটোয়া মহকুমার উত্তর ভাগ) এই অংশের অন্তর্গত। দক্ষিণ রাঢ় অঞ্চল বর্তমানের হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান জেলা এছাড়া অজয়, দামোদর নদের মধ্যবর্তী এলাকা ও বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী এলাকা দক্ষিণ রাঢ় অঞ্চলের অন্তর্গত। গৌড়: গৌড় অঞ্চলটি শশাঙ্কের আমলে রাজ্যের রাজধানী ছিল। এই রাজার আমলে এই অঞ্চলের সীমানা অনেকটা বৃদ্ধি পায়। মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, বীরভূম প্রভৃতি অঞ্চল বর্তমানে এই অঞ্চলের অন্তর্গত। এছাড়াও ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ের এলাকা, অর্থাৎ মুর্শিদাবাদ এলাকা, এছাড়াও উত্তরবঙ্গ থেকে ওড়িশা (পুণ্ড্রবর্ধন থেকে ওড়িশা) উপকূল পর্যন্ত এলাকা এই অঞ্চলের অন্তর্গত। (খ) শশাঙ্কের সঙ্গে বৌদ্ধদের সম্পর্ক কেমন ছিল সে বিষয়ে তোমার মতামত দাও। উঃ রাজা শশাঙ্ক ছিলেন শৈব উপাসক। তিনি ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তবে অনেকের মতে তিনি ব্রাম্মণ্যধর্মের বিরোধী ছিলেন। তার আমলের চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙের বিবরণী থেকে জানা যায়, তার বৌদ্ধধর্ম বিরোধিতার কথা। বাণভট্টের রচনায় শশাঙ্ককে 'গৌড়ভুজঙ্গ' ও 'গৌড়াধম'ও বলা হয়েছে। শোনা যায় তিনি অনেক বৌদ্ধ মঠ, বৌদ্ধবৃক্ষ ও বৌদ্ধসন্ন্যাসী/ ভিক্ষুকদের হত্যা করেছে। তিনি বৌদ্ধদের ধর্মীয় স্মারকও নষ্ট করেছিলেন বলে শোনা যায়।
তবে, অনেকের মতে তিনি শৈব উপাস্য হলেও তিনি রাজ্যের করে হাজার বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও বৌদ্ধমঠের ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এবং তার রাজধানীতে বৌদ্ধ শৈব উভয়সম্প্রদায়ই বসবাস করত বলে জানা যায়। তার রাজত্বকালের কয়েকবছর পরে কর্ণসুবর্ণ নগরের উপকণ্ঠে রপ্তমৃত্তিকা বৌদ্ধবিহারের সমৃদ্ধিও দেখা যায়। সুতরাং তার সম্বন্ধের সমস্ত ধারণা অতিবঙ্কিত বলেই মনে করা হয়। কোনো ব্যক্তিগত বিদ্বেষ থেকেই শশাঙ্ক সম্বন্ধে তাদের এই মতামত বলে অনুমান করা হয়। (গ) ত্রিশক্তি সংগ্রাম কাদের মধ্যে হয়েছিল? এই সংগ্রামের মূল কারণ কী ছিল? উঃ অষ্টম শতাব্দী থেকে পাল-গুর্জর প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূটদের মধ্যে কনৌজকে (হবের্ধনের রাজধানী) ঘিরে দীর্ঘ টানা লড়াই চলে। তা ইতিহাসে ত্রিশক্তি সংগ্রাম নামে পরিচিত ছিল। এই সংগ্রামের কারণগুলি হল- ১. উত্তর ভারতের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র কনৌজকে ঘিরে প্রতিবেশী এলাকাগুলি সমৃদ্ধ হওয়ায়, লোভ সংবরণ না করতে পেরে তারা দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। ২. হর্ষবর্ধন উত্তর ভারতে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিপত্য বিস্তার করেছিল তার অধিকাংশ দখল করার জন্য পাল, প্রতিহার রাষ্ট্রকুটরা যুদ্ধে নিযুক্ত হয়। ৩. কনৌজের ভৌগোলিক অবস্থা ও খনিজ সম্পদের সমৃদ্ধি প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকে প্রলুদ্ধ করে, উর্বরা গাঙ্গেয় অঞ্চল দলের লোভে তারা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ৪. অষ্টম শতকের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিবেশী আঞ্চলিক শক্তিগুলি কনৌজে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে,উত্তর ভারতের হারানো গৌরব ফিরাতে সচেষ্ট হয়। (ঘ) ছক ২.১ ভালো করে দেখো। এর থেকে পাল ও সেন শাসনের সংক্ষিপ্ত তুলনা করো। উঃ প্রথমে সেন রাজবংশ দিয়ে শুরু করি। এরা খ্রিস্টীয় একাদশ / ১২০৪ / ৫ খ্রিস্টাব্দে (খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকের প্রথম ভাগ) অবধি রাজত্ব করেছিলেন। এই রাজবংশের প্রধান রাজা হলেন বল্লাল সেন, লক্ষ্মণ সেন। এই রাজশক্তির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল বর্ণভেদপ্রধা, তুর্কি অভিযান। তিনি কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করেন। বল্লাল সেন তিনি 'অরি রাজমণ্ডল শঙ্কর' ও 'গৌড়েম্বর' উপধি গ্রহণ করেন। বাংলার কবি জয়দেব তার সভাকবি ছিলেন। তার নামানুসারে গৌড়ের নাম হয় লক্ষণাবতী যা ওই আমলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর বলে পরিচিত ছিল। তরপরে পাল বংশের কথা। যদিও পাল বংশরা সেনরাজাদের পুর্বেই বাংলায় রাজত্ব করেছে। মাৎস্যন্যায় এর ফলে, বাংলাদেশে যে দুর্দিন এসেছিল, অষ্টম শতকে স্থানীয় রাজা গোপাল সিংহাসনে বসে, সেই দুর্দশা দূরীভূত করার চেষ্টা করেন। তার পরে তার পুত্র ধর্মপাল বাংলার সিংহাসনে বসেন। তিনি বিক্রমশীল মহাবিহার এবং ওদন্তপুরী মহাবিহার নির্মাণ করেন। তিনি সোমপুরী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন।বৌদ্ধ সাহিত্যিক হরিভদ্রের রচনাবলিতে তার কথা জানা যায়। তাঁর পুত্র দেবপালও (৮১০-৮৫০খ্রি.) বিখ্যাত রাজা ছিলেন। তিনি নালন্দায় বৌদ্ধমঠ নির্মাণের জন্য পাঁচটি গ্রাম দান করেন। সেটি পরবর্তীকালে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত হয়। যেখানে পরবর্তীকালে নানান আধুনিক বিষয়বস্তু নিয়ে শাস্ত্রপাঠ ঢালে দীর্ঘদিন ধরে। তারপর বিগ্রহপাল, নারায়ণ পাল, রজ্যপাল, প্রথম মহীপাল, তীয় মহীপাল, রামপাল প্রভৃতি বিখ্যাত রাজারাও রাজত্ব করেন প্রায় ১১২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। কৈবর্ত বিদ্রোহের শেষে পালবংশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সেন সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে।
(ঙ) দক্ষিণ ভারতে ঢোল শক্তির উত্থানের পটভূমি বিশ্লেষণ করো। কোন কোন অঞ্চল চোল রাজ্যের অন্তর্গত ছিল? উঃ পাল শাসনের শেষ দিকে, তাদের দুর্বলতার সুযোগে চোল রাজশক্তি আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন।কাবেরী ও তার শাখানদীর বধীপ অঞ্চলকে ঘিরে এই সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। সেখানকার রাজাকে পরাজিত করে, চোলরাজ বিজয়ালয় (৮৪৬-৮৭১খ্রি.) চাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তাঞ্জোর নামে নতুন নগরী ছিল চোলদের রাজধানী। ৯৮৫ সালে প্রথম রাজরাজ বর্তমানে কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক জুড়ে তার সাম্রাজ্য বিস্তৃত করেন।তার পুত্র প্রথম রাজেন্দ্র চোল চালুক্য শক্তিকে পরাজিত করেন ও গঙ্গা উপকূলবর্তী অঞ্চল নিজের রাজ্যভুক্ত করে, 'গঙ্গাই কোল্ডচোল’ উপাধি গ্রহণ করেন। এরা দুজনই দক্ষ নৌবাহিনী তৈরি করেন। এর সাহায্যে তিনি আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি দখল করেন ও ভারতীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতেও সক্ষম হন। দক্ষিণের পাণ্ড্য, উত্তরের পর বর্তমান কেরল, তামিলনাড়ু এবং কর্ণটিকে বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
৫. কল্পনা করে দেখো (১০০-১৫০ শব্দের মধ্যে) পূর্ণমান-৮ (ক) মনে করো তুমি রাজা শশাঙ্কের আমলের একজন পর্যটক। তুমি তার থেকে কর্ণসুবর্ণ যাচ্ছ। পথে তুমি কোন্ কোন্ অঞ্চল ও নদী দেখতে পারে। কর্ণসুবর্ণে গিয়েই বা তুমি কী দেখবে? উঃ সবাই জানে, গৌড়ের প্রতিষ্ঠাতা শশাঙ্ক। মুর্শিদাবাদ জেলায় বহরমপুরে ছয় মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে রাঙামাটি নামক জায়গায় বলে জেনেছি। আমি তমলুক শহর যা রূপনারায়ণ নদীর তীরে অবস্থিত, সেখানে গিয়েছিলাম। এটি ছিল রাঢ়ের অন্তর্গত একটি বাণিজ্যকেন্দ্র, সেখান থেকে কর্ণসুবর্ণে গেলে, আমরা দক্ষিণ রাঢ়ের অনেক অঞ্চল পশ্চিমে সূষ্ম অঞ্চল তার পূর্বদিকে বঙ্গাল অঞ্চল দেখতে পাই। এদিকে ভাগীরথী, যমুনা, অজয়,ময়ূরাক্ষী, জলঙ্গি ইত্যাদি দেখতে পাই। এদিকে ভাগীরথী, যমুনা, অঞ্জয়, ময়ূরাক্ষী, জলঙ্গি ইত্যাদি নদী দেখা যায়। তাম্রলিপ্তের দক্ষিণে কাঁসাই, সুবর্ণরেখা নদী পাওয়া যায়। এর একেবারে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। জানা যায়,এই পথ ধরেই হিউয়েন সাঙ কর্ণসুবর্ণে পৌঁছেছিলেন। কর্ণসুবর্ণে গিয়ে জানলাম, মুর্শিদাবাদ জেলার চিরুটি রেলস্টেশনের কাছে রাজবাড়ি ডাঙায় প্রাচীন রক্তমৃত্তিকা অঞ্চলে বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। চিনাপর্যটক হিউয়েন-এর বিবরণী থেকে জানা যায়, কর্ণসুবর্ণ-এর কাছেই অবস্থিত। ওখানকার স্থানীয় আদিবাসীরা কর্ণসুবর্ণকে ‘রাজা কর্ণের প্রাসাদ' বলেই জানে। গৌড় জনসমৃদ্ধ, এখানকার মানুষেরাও সমৃদ্ধ,জমিও নীচু ও আর্দ্র প্রকৃতির। এখানে চাষবাস হয়। প্রচুর পরিমাণে ফুল ও ফল পাওয়া যায়। এখানকার জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির। এখানকার মানুষেরা ভালো চরিত্রের ও শিক্ষাদীক্ষার পৃষ্ঠপোষক। এখানে শৈব ও বৌদ্ধ, উভয়সম্প্রদায়ের মানুষই বসবাস করে। এখানে অনেক বাণিজ্যকেন্দ্র ও প্রশাসনিক কেন্দ্রও ছিল। আশেপাশের গ্রাম থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এখানে আসত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক সমৃদ্ধিও যথেষ্ট ছিল। এখানের বারবার বিভিন্ন রাজার কাছে রাজনীতির পালাবদল হয়েছে। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর এই শহর কিছুদিনের জন্য ভাস্করবর্মার হাতে যায়। আর বিশেষ কোনো বিবরণী জানা সম্ভব হয়নি। (খ) মনে করো দেশে মাৎস্যন্যায় চলছে। তুমি ও তোমার শ্রেণির বন্ধুরা দেশের রাজা নির্বাচন করতে চাও। তোমাদের বন্ধুদের মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো। উঃ সময়কাল- ৭৪৯ খ্রস্টাব্দ। স্থান—গৌড়! অরুপ—এইভাবে তো থাকা সম্ভব নয়। দেশে মাৎস্যন্যায় শুরু হয়েছে। কোনো রাজা নেই, কোনো শাসক নেই, দেশে আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছুই নেই। যে যা খুশি তাই করছে। সুবল – এখান তো ভয়ে ভয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। বরুন বাড়িতে ডাকাত পড়ে। কখন খেতে ফসল কেটে নিয়ে যায়। বিকেলের পর তো গ্রামের বাইরে বেরোনোই যায় না। রাস্তাঘাটে কোনো প্রহরী নেই। গ্রামরক্ষক বলে কেউ নেই। এইভাবে বাঁচা সম্ভব নয়। নিমাই—সন্ধেবেলা গুরুমশাই এর কাছে পড়তে যেতে পারছি না। বাড়ি থেকে ভয়ে বেরোনই সম্ভব হচ্ছে না। সেই দিন রাজেশের বাড়িতে ডাকাতি হল, কেউ কিছুই করতে পারল না। রতন - সে রকম কাউকে যদি রাজা নির্বাচন করা হয়, তবে তা কেমন হয়? তাহলে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে আসবে। অরিত্র–সেরকম কাউকে কি পাওয়া যাবে? আর পেলেও সবাই সমর্থন করবে কি? চলো সবাই মিলে গ্রামের জমিদার প্রতাপ নারায়ণ মুখার্জীকে সব আনাই। তিনি নিশ্চই কিছু একটা করবেন। গ. মনে করো যে তুমি কৈবর্ত্য নেতা দিবা। পাল রাজাদের বিরুদ্ধে তোমার অভিযোগগুলি কী কী থাকবে? কীভাবেই বা তুমি তোমার বিদ্রোহী সৈন্যদল গঠন ও পরিচালনা করবে তা লেখো। উঃ আমি দিব্য। আমি পালরাজাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছি। তার কারণ হল- ১। পালরাজারা আমোদপ্রিয় ও অলস হয়ে উঠেছে। ২। রাজকর্মচারীদের উপর বেশিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ৩। তারা কৈবর্তাদের কোনোদিনও সম্মান দেয়নি। ৪। তাদের উপর দিনের পর দিন অত্যাচার বেড়েই চলেছে। ৫। প্রথমে নিজেদের সম্প্রদায়ভুক্ত সকল মানুষকে একত্রিত করে, আমাদের উপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে একত্রে সৈন্যদলের সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করব। ওদের ওপর রাতের অন্ধকারে বাঁপিয়ে পড়ব। ওরা অপ্রস্তুত থাকবে এবং পরাজিত হবে।

মন্তব্যসমূহ