এলাহাবাদ দুর্গটি গঙ্গা-যমুনার সঙ্গম স্থলে অবস্থিত হওয়ায় এখান থেকে জোর নজরদারি চালানো যেত। আটক দুর্গ ও রোটাস দুর্গও অবস্থানগত কারণে গুত্বেপূর্ণ। এই কেন্দ্রগুলি সাহায্যে গঙ্গা যমুনার বিশাল অববাহিকা উর্বর-সমতল অঞ্চলের মানুষ কৃষি শিল্প ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। আকবরের সময় বুন্দেলখাণ্ডের প্রধান দুর্গ নগর গোয়ালিয়র রাজপুতানার চিতোর রনথম্বোর জয়সলমীর অস্ত্রীরগড় দুর্গ দখল করেন। সম্রাট শাহজাহানবাদ গড়ে তুলে ছিলেন। এই শহরের পরিকল্পনা করার সময় হিন্দু এবং ইসলামি শাস্ত্রকে অনুসরণ করা হয়েছিল। শাহব্বাহান তার স্থাপত্য শিল্পকলায় লাল পাথর ব্যবহার করেছিলেন। তৈরী হয়েছিল লালকেল্লা, জামা মসজিদ। পুরো জাহজাহানবাদ শহর টিকে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়েছিল। এতে সাতাশটা স্তম্ভ এবং ছোট বড় অনেক দরজা বনানো হয়েছিল। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে দিল্লী জনবসতি ছিল মিশ্র প্রকৃতির সবচেয়ে সুদুর বাড়ীগুলিকে হাভেলী বলা হত। এর নিচুত্তরের বাড়িতে মকান ছোটম্বরগুলিকে কোর্টরি বলা হত। এছাড়া বাংলো বাড়িতো ছিলই। সাধারণ শ্রমিক কারিগর দাসদাসী এরা সবাই কুঁড়ে ঘরে থাকত। আমির এবং পরির কারিগর এক স্থানে পাশাপাশি
থাকত। একে বলা হত মহল্লা। রাজপথকে বাজার বলা হত। রাস্তার দুই ধারে সারিবদ্ধ দোকান ছিল। যেকোন সম্প্রদায়ের উৎসব অনুষ্ঠানে সব সম্প্রদায় যোগ দিত মহরমে শিল্পসূষ্টি একইভাবে সাড়া দিত। আর রাজধানী হিসাবে শাহজাহনাবাদ বেশী দিন স্থায়ী ছিল এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
লালকেল্লা
লালকেল্লা ছিল ঐতিহ্যসম্পন্ন কেননা। এটি খুবই দুর্ভেদ্য আয়তনে আগ্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এর পূর্বে নদী পশ্চিমে পরিখা, দুর্গের চারপাশে তারটি বড় দরজা দুটি ছোট দরজা সাতাশটি বুরস ছিল। দুর্গের একদিকে রাজ পরিবার বাস করত। অন্যদিকে ছিল বিভিন্ন দপ্তর। এটি তৈরী করতে অনুমানিক খরচ ৯১ লক্ষ টাকা। জল সরবরাহের জন্য দিল্লী দুর্গের মধ্যে নালা কাটা হয়েছিল। জলবহন কারী এই নানাগুলি 'নেহর-ই-বিহিশত' অর্থাৎ 'স্বর্গের খাল বলা হত'।
মুঘলদের রাজধানী বদল : আগ্রা থেকে শাহজাহানবাদ দিল্লি :
যমুনা নদী ঘন ঘন দিক পরিবর্তন করছিল। যমুনার পাড় ভেঙ্গে শহর ক্রমশ ঘিঞ্জি হয়ে পড়ে। তাই তৈরী হল শাহজাহানবাদ। এর পরে ভারতের রজনীতে দিল্লী কতটা ও গুরুত্বপূর্ণ তাকে স্বীকার করে নেওয়া হল। এই শহর তৈরী হয়েছিল ১৬৩৯ খ্রিঃ।১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহান আগ্রা থেকে দিল্লী চলে আসেন।
চাঁদনিচক
শাহজাহানের কন্যা ছিলেন জাহানআরা। তিনি লালকেল্লা থেকে জাহানআরা কোমের চক পর্যন্ত বিস্তৃত বাজারের উত্তর দিকে একটি সবাইপানা, বাগান এবং পটিপে একটি স্নানাগার তৈরী করে দিয়েছিলেন। প্রচলিত আছে চাঁদনী রাতে চাঁদের আলো পড়ে জল চিকচিক করত বলে এই স্থানের নাম হয়েছে চাঁদনিচক্। আবার এও প্রচলিত আছে যে এই বাড়াবে সোনা-রূপার টাকার বিনিদের জন্য চাঁদনিচক নামটি তৈরী হয়েছে।
বণিক ও বাণিজ্যঃ খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতক থেকে শুরু করে অষ্টাদশ শতকের মধ্যেকার ভারতের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্রমশ উন্নতি হচ্ছিল। এই সময় পরিবহন ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত ছিল না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলে তেমন কিছু ছিল না। সড়ক এবং ভাল পথেই ব্যবসা চলত। লুটেরাও ডাকাতদের ভয় থাকলেও বণিকেরা ভারবাহী পশুর পিঠে মালপত্র বয়ে নিয়ে গিয়ে ব্যবসা করত। ব্যবসাকেন্দ্রগুলো গড়ে উঠেছিল নানা হাট, মন্ডি, গঞ্জ, ছোট বড়ো বাজারঘটেছিল নামে পরিচিত ছিল। তা সবই ছিল নদীর বা সমুদ্রের পাড়ে। নানা কারণে এই সময় বাণিজ্যের বিস্তার ঘটেছিল।সুলতানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ছিল। তারা পুরোন শহরগুলিতে নতুন নতুন ঘরবাড়ী তৈরী করে দিয়েছিলেন।মধ্যযুগে ভারতের শহরগুলি কেমনভাবে গড়ে উঠেছিল তার বর্ণনা পাওয়া যায় লেখা পাত্রে। শহরের সুলতান নিজে বসবাস করছে তাঁর সঙ্গে অভিজাত, সৈনিক, সাধারণ মানুষ বসবাস করতে শুরু করলে শহর জনবহুল হয়ে ওঠে। এই সব মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের যোগান দেওয়া, প্রাসাদ নির্মাণ, মসজিদ, বাজার রাস্তাঘাট সবাইখানা নির্মাণের জন্য স্নানাগার জল সরবরাহের জন্য শ্রমিকের দরকার হত। এরা ছিলেন নানাজাতের নানা বর্ণের কেউ ভারতীয় কেউ ভারতের বাইরের লোক কেউ স্বাধীন শ্রমিক কৃতদাস। সুলতানরা সামরিক প্রয়োজনে ব্রিাট সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। এর ভরণ-পোষণের জন্য আলাউদ্দিন খলজির সময় থেকে কৃষকদের কাছ থেকে নগদ কর আদায় করা চালু হয়। এছাড়া সুলতান ও অভিজাতদের বিশ্বস ব্যসনের জন্য প্রয়োজনীয় মূল্যবান জিনিসের ব্যবসা সে যুগের বাণিজ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল।
সুলতানি যুগের ব্যবসা বাণিজ্যের ধরণ
দেশের ভেতরের বাণিজ্যঃ দেশের মধ্যে দুই ধরনের বাণিজ্য চলত (১) গ্রাম ও শহরের মধ্যে বাণিজ্য (২) দুই শহরের মধ্যেকার বাণিজ্য। মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রয়োজন মেটাবার জন্য গ্রাম থেকে শহরে যেসব জিনিসপাঠানো হত সেগুলি ছিল কম দামের জিনিস। এই সব জিনিসে মধ্যে ছিল খাদ্য শস্য খাবার তেল, ঘি, আনাজ, ফল,লবণ ইত্যাদি। এই সব জিনিস শহরের বাজারে বিক্রিত হত। দুটি শহরের মধ্যে যে সমস্ত পণ্য আদান প্রদান হত সেগুলির মধ্যে ছিল দামি মদ, সূক্ষ্ম মসলিন বস্তু, রেশম বস্তু প্রভৃতি। বাংলাদেশ, করমণ্ডল ও গুজরাতের সুতি ও রেশমের কাপড়ের চাহিদা ছিল সর্বত্র। হস্ত শিল্পেরও বাণিজ্য হত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল চামড়া, কাঠ ও ধাতু দিয়ে তৈরী জিনিস, গালিচা ইত্যাদি। এই যুগেই ভারতে প্রথম কাগজ তৈরী শুরু হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নতি ঘটছিল। রাস্তার ধারে ধারে সরাই-খানা গড়ে উঠেছিল। এখানে বণিকরা বিশ্রাম নিতে পারতেন, তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হত। ব্যবসার সুবিধার জন্য পার মুদ্রা, তঙ্কা ও তামার মুদ্রা জিতল চালু করা হয়েছিল।
দেশ বিদেশের বাণিজ্য :
ভারতে তৈরী জিনিসে মান ছিল খুবই ভাল। তাই স্থলপথে ও জলপথে এই দ্রব্য বিদেশে রপ্তানী হত। গুজরাট ও মালাবার বন্দর থেকে আরব সাগর পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগরের তীরবর্তী দেশে যেত প্রধানতঃ বস্ত্র, মশলা, নীল ও খাদ্যশস্য। যুদ্ধ বন্দী দাসদেরও রপ্তানী করা হত পশ্চিম এশিয়াতে সুলতানদের আমলে। ওইসব দেশ থেকে এদেশে আসত ঘোড়া, কাচের দ্রব্য, সুগন্ধ দ্রব্য। এদেশ থেকে বিশেষ ধরনের কাপড়, দুগ্ধজাত দ্রব্য, মাছ ওইসব দেশে রপ্তানী হত। সুরাট ছিল ভারতের প্রধান বন্দর। এছাড়া পূর্বদিকে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা ছিল দণি ও পূর্ব এশিয়া দেশগুলিতে। গুজরাট থেকে যেত রঙীন কাপড়, বাংলা থেকে যেত সুতির কাপড়,রেশম বস্তু, দুগ্ধজাত দ্রব্য, রেশমবস্ত্র ও চিনি। এর বিনিময়ে আসত গুজরাটে দণি-পূর্ব এশিয়ার মশলা, মালদ্বীপ থেকে আনা বড়ি ওই বাংলায় ব্যবহার হত। বিভিন্ন উপকূল থেকে জলপথে বাণিজ্য চলত। শুধু জলপথ নয়,স্থলপথেও প্রধানত বাণিজ্য চলত মধ্য এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন স্থানের সাথে। সুলতান শহর ছিল বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র। এশিয়া থেকে সড়ক পথে আসত মূল্যবান ধাতু সোনা রুপা রত্ন মুদ্রা তৈরীতে ওইসব মূল্যবান ধাতু ব্যবহার হত। আলেকজান্দ্রিয়া, ইরাক ও চিন থেকে আসত রাতে ও রেশম। তবে এই সমস্ত পণ্যের ত্রেতা ছিল সমাজের উঁচু তলা মানুষেরা।
ভারতীয় বাণিজ্যের জগৎ :
ভারতের বাণিজ্য কাঠামোর ছিল চারটি গুপ্ত (১) বণিক (২) সরাফ (৩) দালাল (৪) বিমা।
বণিকঃ
বণিকদের নানা নামে অভিহিত করা হত। করওয়নি, নায়ক, কনজারা। এদের প্রধান কাজ ছিল শস্য পরিবহন করা, শুধু তাই নয় এরা সুদের ব্যবসাও করত। বড়ো বড়ো বণিক গোষ্ঠী ছাড়া ছোট ছোট ফেরিওয়ালা ছিল বণিকদের হিন্দু এবং মুসলমান দুই গোষ্ঠী ছিল। উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল সুফি সাধকদের মধ্যে কেউ কেউ ছোটো খাটো ব্যবসা করত। সরাফং সরাফ ছিল মধ্যযুগের ব্যাপার। এরা টাকার বিনিময়ে কাজ করত।
দালালঃ দালাল বা এজেন্টদের অস্তিদ মধ্যযুগে দেখা যেত। এরা এেতো ও বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখত। জিনিসের দাম ঠিক করে দিত।
বিমাঃ এই যুগে বিমার বিমার ব্যবস্থাও ছিল। ব্যবসায়ীরা দূরে দূরে বাণিজ্যের ঝুঁকি নিয়ে পণ্য পাঠাত। মধ্যযুগে ভারতীয় বণিকদের মধ্যে গুজরাটি, মালাবারি, তামিল, ওড়িয়া, তেলেও, বাঙিকা বণিকরা সুনাম অর্জন করেছিল। ধনের দিক দিয়ে বিচার করলে এরা ছিল হিন্দু মুসলমান ও জৈন্য। যারা খুব ধনী ছিল তাদের নিজস্ব জাহাজ থাকত। বাকিরা অন্যদের জাহাজে করে জিনিসপত্র পাঠাত।
হুন্ডি
তুর্কি শাসকদের আমলে সরীফরা ছড়ি নামে এক ধরনের কাগজ চালু করেছিল। বণিকরা কোন স্থান থেকে সরাফকে টাকা জমা নিয়ে সেই কাগজ কিনে নিয়ে অন্য স্থানে তা প্রয়োজন মতো ভাঙ্গিয়ে নিত। এতে একস্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা পাঠাবার সুবিধা হয়েছিল।
যুদ্ধ ও বাণিজ্যঃ পর্তুগিজ যাজক ফাদার আস্তেনিও এর মনসেরাট এর লেখা থেকে মুঘলদের যুদ্ধযাত্রার বিবরণ পাওয়া যায়। বিশাল মুঘল বাহিনীর ভরণপোষণের জন্য সেনাবাহিনীর যাত্রাপথের দু-ধারে সম্রাটের প্রতিনিধিরা ছড়িয়ে।পড়ে রসদ জোগাড় করতে। স্থানীয় ব্যবসায়ী এসে বাহিনীর সঙ্গে আসা চলমান বাজারে জিনিসপত্র বিক্রি করে যেত এইভাবে যুদ্ধকে কেন্দ্র করেও খাদ্য দ্রব্যের বাণিজ্য চলত সেকালে।
পথের হদিস : জলপথ ছিল সে যুগের প্রধান বাণিজ্যপথ। এদের মধ্যে উত্তর ভারতে গঙ্গা ও যমুনা নদী ছিল প্রধান জলপথ। আগ্রা, এলাহাবাদ, বারাণসী, পাটনা, রাজমহল, হুগলী, ঢাকা প্রভৃতি শহর নদীগুলোর মাধ্যমে যুক্ত ছিল। উত্তর-পশ্চিমে লাহোর থেকে শুরু করে সুদূর দক্ষিণে সিন্ধুনদের মোহনা পর্যন্ত এলাকা জলপথে যুক্ত ছিল। জলপথ ছাড়াও উত্তর ভারত থেকে গুজরটি পর্যন্ত যাওয়ার জন্য সড়ক পথও ছিল। একটি ছিল রাজপুতানার আজমির হয়ে। অন্যটি মধ্য ভারতের বুরহানপুর হয়ে। পূর্ব ও পশ্চিম তাটের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল সড়কপথ। এই পথ ছিল সুদূর প্রসারী। গুজরাটের সুরাট থেকে ঔরঙ্গাবাদ, গোলকুন্ডা হয়ে বঙ্গোপসাগরের তীরে মসুলিপটনম পর্যন্ত।এই যুগে মানুষ কৈমনভাবে ঘুরে বেড়াত তার চমৎকার বিবরণ পাওয়া যায় চিশতি সুফি সাধক গেসু দরাজের জীবন থেকে। শৈশবে তিনি দিল্লী চলে যান সেখান থেকে দৌলভাবান সাত বছর পরে ১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লী ফিরে আসেন। সেখানে তেষট্টি বছর ছিলেন ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৈমুর লঙ দিল্লি আক্রমণ করলে তিনি আবার দাক্ষিণাত্যে ফিরে যান। ভারতে বিদেশী বণিকদের আগমন ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মশলার বাজার দমন করার উদ্দেশ্য পোর্তুগিজরাই প্রথম উৎসাহ দেখিয়েছিল। ইউরোপে ভারতীয় মশলার মধ্যে গোলমরিচের চাহিদা ছিল বেশী। এই অন্তরীপ ঘুরে ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের মালাবার উপকূলের কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছান। ভাস্কো-দা-গামা, এই বন্দর ছিল আরব সাগরের তীরে। পশ্চিম এশিয়া বন্দরগুলির সঙ্গে খুব ভালো যোগাযোগ ছিল। ফলে নানা দেশের বণিকরাই এখানে আসত বাণিজ্য করতে। এরপর পোর্তুগিজ নাবিক ডিউক অফ আবুঝার্ক এর হাত ধরে গোয়ায় পোর্তুগিজদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইউরোপীয় বণিকগণ সমুদ্রের উপর দখল রাখার জন্য তাহাকে উন্নত মানের আগ্নেয় অস্ত্র রাখত, এরই বলে বলিয়ান হয়ে তারা গভীর সমুদ্রে জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করত। তবে পোর্তুগীজ বণিকরা সব বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করে ব্যবসায় অংশগ্রহণ করে। এরপর ইংরেজ বণিকরা ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে। তাদের সাথে ডাচ বা ওলন্দাজ ফরাসি দিনেমার প্রমুখ বণিকরা ভারতে আসে। মুঘল যুগে ওলন্দাজর পশ্চিম ভারতে সুরাট ও দাক্ষিণাত্যে মসুলিপত্তনম বন্দর এলাকায় জানিয়ে বসেছিল। দক্ষীণ ভারতে ছিট কাপড়ের চাহিদা ছিল দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়া দেশগুলোতে। সুরাট ছিল প্রধান বন্দর। এরপর ডাচ বা বাংলাদেশে এসে কুঠি তৈরি করে। প্রথম দিকে ইংরেজ বণিকরা মসুলিপটনম ও পরে সুরাটে বানিজ্য কুঠি স্থাপন করে। এরপর ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস্ এর শাসনকালে ১৬০৩ থেকে ১৬২৫ এর মধ্যে দূত হিসাবে টমাস রো মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে তার রাজসভায় আসেন। তারই চেষ্টায় আল, পাটনা, বুরহানপুরে ইংরেজদের কুঠি স্থাপিত হয়েছিল। পোর্তুগিজরা দস ব্যবসা করত, এবং সংবাদ পেয়ে শাহব্বাহন তাদের তাড়িয়ে দেন এর ফলে ওলন্দাজ, ইংরেজ ও ফরাসী বণিকর অবরে বাংলায় বাণিজ্য কার সুযোগ পেয়ে যন। ইউরোপীয় বণিকগণ সরাসরি বাণিজ্য করত না। তারা ভারতীয় দালালনের মাধ্যমে কাজ করত। তারা দালালনের দাদন দিয়ে দিত। দালাগণ বণিকদের চাহিদা মত জিনিস বানিয়ে দিত। এরই পথ ধরে আসে বাণিজ্যবৃদ্ধি। চাষিরা ধানবাদ দিয়ে আফিম ও রেশম চাষ করতে শুর্ব করেন। এইভাবে বাজারে ফসল বিত্তি করে লাভ করার জন্য যে চাষ হত তাকে বাণিজ্যিক চাষ বলেন। এর ধীরে ধীরে ইউরোপীয় বণিক কোম্পানীগুলি আস্তে আস্তে ঘাঁটি তৈরী করতে শুরু করে। বড় বড় কুঠি তৈরী করে অস্ত্র শস্ত্র সাজিয়ে রাখে। এখানে তারা বাসগৃহ গুদাম বানায়।তারা বড় বড় পাহাড়ের মালিক ছিল। জাহাজগুলি নৌযুদ্ধে ছিল। অর্থের জোয়ার ইউরোপীয় বণিকদের এদেশমুখি করে তোলে। ভারতের গুজরাট উত্তর ও দহিণ করমণ্ডল এবং বাংলা ছিল প্রধান ঘাঁটি। সুরাট, মাসুলিপটনম পুলিকট এবং হুগলি ছিল ইউরোপীয়দের প্রধান বাণিজ্য ঘাঁটি। করমণ্ডলের গ্রামগুলোতে সুতো কটুনি উড়ি কাপড় ধোলাই এবং রং করার আগে নিযুক্ত শ্রমিকদের সংখ্যা ছিল চাষিদের থেকে বেশি মুঘল অভিজাতরা অনেকেই ব্যবসা করকরে রাখতে চাইল তখন ভারতের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর হয়ে রইল।
খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে ইউরোপীয়দের মধ্যে ছিল ইউরোপের সীমানা ছাড়িয়ে অন্য মহাদেশ গুলোতে গিয়ে ব্যবসা করে ধন-সম্পদ আয় করা। এইভাবে তারা পৌঁছে গেল আফ্রিকা, এশিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমরিকাতে। রাজা যাজকদের উৎসাহেই বিশেষ করে স্পেন, পোর্তুগাল, হল্যান্ড, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশের বণিক ও শাসকরা উৎসাহিত হয়ে ওঠে।
ইউরোপীয় কোম্পানির কুঠি গুলি কেমন ছিল ?
ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি : ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে লণ্ডনে গড়ে ওঠে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী। ১৬০২ সালে তৈরী আমস্টারডামে ডাচ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পনি। ফরাসী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৈরী হয় ১৬৬৪ সালে।
টুকরো কথাঃ বাংলায় বাণিজ্য কুঠি : পোর্তুগীজরা প্রথমে বাংলায় বাণিজ্য কুঠি তৈরি করে ব্যান্ডেলে। চুঁচুড়ায় ছিল ডাচদের ঘাঁটি। চন্দননগরে ফরাসীদের ঘাঁটি। শ্রীরামপুরে দিনেমার ও কলকাতায় ছিল ইংরেজদের কুঠি।
মন্তব্যসমূহ