ইসলাম ও ভারতীয় মিশ্রণের ইতিহাস । সপ্তম শ্রেণী । islam and india history

 ইসলাম ও ভারতীয় মিশ্রণের ইতিহাস


ইসলাম ও ভারতীয় মিশ্রণের ইতিহাস । সপ্তম শ্রেণী । islam and india history


ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস ৭১২-১৫২৬


পূর্বপাঠে আমরা ভারতের প্রাচীন রাজনৈতিক ইতিহাসের সম্বন্ধে জানলাম। এই সময়ই ভারতে ইসলামি সভ্যতার যোগাযোগ ঘটে। এই সময় থেকেই ভারতের রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির ওপর ইসলামি সভ্যতার গভীর প্রভাব পড়ে এবং ফলে বাংলার অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি সব কিছুই পরিবর্তিত হয়, যার প্রভাব পড়ে মানুষের জীবনযাত্রা ও সমাজের ওপর।

ভারতের ইসলামি সভ্যতার বিকাশ ঘটে, প্রধানত আরবকে কেন্দ্র করেই। ভারতের পশ্চিমে আরব সাগর পেরিয়ে, আরব উপদ্বীপ অবস্থিত। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ অঞ্চল জুড়েই মরুভূমি বা শুকনো ঘাসজমি বিস্তৃত। এই অঞ্চলের পশ্চিম দিকে লোহিত সাগর, পূর্বদিকে পারস্য উপসাগর এবং দক্ষিণে আরব সাগর অবস্থিত। এই অনালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম। তাই এখানকার অঞ্চলের আবহাওয়া খুব গরম প্রকৃতির। এখানকার বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম অর্থাৎ বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় চাষবাসের সুযোগসুবিধাও খুব ভালো নয়। মনোরম পরিবেশ নয় বলে গাছপালার ধরনও আলাদা। এখানে কাঁটাজাতীয় ঝোপ ঝাড় বেশি পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। পর্ণমোচী বা চিরহরিৎ বৃক্ষ খুবই কম দেখা যায় বললেই চলে। যাতায়াত ব্যবস্থা খুব উন্নত না হলেও, মরুভূমি ভ্রমণের জন্য উট পাওয়া যায়। অন্যান্য পশুপাখির তুলনায় উটই বেশি দেখা যায়। উটই হল মরুভূমির অন্যতম প্রধান নিদর্শন খেজুর ও উটের দুধ হল এই অঞ্চলের মানুষদের প্রধান খাদ্য। এখানকার যাযাবর মানুষদের 'বেদুইন' বলা হয়। তারা সকলেই প্রায় উট পালন করে বাড়িতে।এখানকার মানুষেরা নিজেদের আরব বলে পরিচয় দিত এবং এখানে মক্কামদিনা নামক দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল, যা বর্তমানে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান বলে বিখ্যাত।

আরবদের সঙ্গে ইসলামের যোগাযোগ প্রথম হয়েছিল তুর্কিরা এদেশে আসার অনেক পূর্ব থেকেই। খ্রিস্টীয় অষ্টম-নবম শতকে আরব বণিকরা যখন বাণিজ্যের কারণে ভারতের পশ্চিম উপকূলে আসতেন, তখন সিন্ধু নদী মোহনায়, মালাবারে আরবিদের অর্থাৎ মুসলমান বণিকরাও বসতি গড়ে তোলে। এর থেকে যেমন এই আরবি মুসলমান বণিকরা লাভবান হয়েছিল, ঠিক তেমনই এই অঞ্চলের স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও প্রচুর লাভবান হয়েছিল। এমনকি এই অঞ্চলের শাসকেরাও তেমনই লাভবান হয়েছিল। ভারতের ইতিহাসে এই বাণিজ্য হিন্দু,জৈন এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সহিষ্কৃতার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। এই যুগে বাগদাদের খলিফাদের জন্য সংস্কৃত ভাষায় রচিত জ্যোতির্বিদ্যা, সহিত্য, চিকিৎসাশাস্ত্র প্রভৃতি সমস্ত বিষয়কে সুবিধা অনুসারে আরবি ভাষায় অনুদিত করার ব্যবস্থা করা হয়।

খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের শুরুতে, আরব উপজাতিগণেরা এই ব্যাবসাকেই তাদের প্রধান জীবিকা বলে গণ্য করেছিল এবং মক্কা শহরটি বাণিজ্যপথের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এই অঞ্চলের অধিকার নিয়ে বিভিন্ন জাতি উপজাতিদের মধ্যে অনবরত বিদ্রোহ লেগেই থাকত। সাধারণত আমরা জানি যে, খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে আরব উপদ্বীপে এক নতুন ধর্মের উৎপত্তি হয়, যা বর্তমানে ইসলাম ধর্ম নামে সকলের কাছে পরিচিত।ওই শতকে ইসলাম ধর্মের প্রচারক হজরত মহম্মদ সাধারণত মক্কামদিনা এই দুই শহরাকে কেন্দ্র করে, আরব উপদ্বীপ ও বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে শুরু করেন, কিন্তু তিনি নিজেও পেশাগত দিক থেকে একজন ব্যবসায়ীই ছিলেন।

হজরত মহম্মদ আনুমানিক ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইসলাম ধর্মকে সঠিকভাবে সকলের নিকটে পৌঁছে দেবার জন্য অগ্রসর হন। কিন্তু তিনি ৬১০ খ্রিস্টাব্দ নগদ সঠিকভাবে সকলের কাছে ঘোষণা করেন যে আল্লাহ বা ঈশ্বর তাঁর কাছে সত্য উন্মোচন করেছেন। এই জন্যই তাকে ঈশ্বরের বা আল্লার বার্তাবাহক বলে মনে করা হত। আল্লার বাণী সাধারণ মানুষ মহম্মদের কাছ থেকেই জানতে পারে। মহম্মদের দ্বারাই সাধারণ মানুষের পক্ষে আল্লাহর বাণী সম্পর্কে অবগত হওয়া সম্ভব হয়। তাঁর প্রচারিত এই ধর্মকে যারা মেনে চলত, তাদেরকে মুসলিম বলে জানা হত। অর্থাৎ তার নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে, যারা চলত সেই সকল অনুগামীরা মুসলিম নামে পরিচিত ছিল।

বিভিন্ন আরব উপজাতিদের মধ্যেকার ধর্মীয় বিভেদ বা গোলযোগকে রক্ষা করার জন্য মহম্মদ এই বিশ্বাসকে চালু করেছিলেন। ফলে বিভিন্ন উপজাতিদের মধ্যেকার ঐক্যবোধ জেগে ওঠে এবং তা ধীরে ধীরে আরও দৃঢ় হতে শুরু করে। তখনকার দিনের মক্কাবাসীদের ধর্মীয় রীতিনীতির সঙ্গে মহম্মদের ধর্মীয় চিন্তাভাবনার যথেষ্ট পার্থক্য ছিল। কিন্তু তার অত্যন্ত প্রভাবশালী ককা আবু অলিবের প্রভাব প্রতিপত্তির প্রভাবে মহম্মদ মক্কাবাসীর নিকট তাঁর কথা বলতে সচেষ্ট হন। কিন্তু তাঁর কাকার মৃত্যুর পর তাঁরা অর্থাৎ সে ও তাঁর অনুগামীরা একত্রে ৬২২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মদিনা শহরে চলে আসেন। মক্কা থেকে মদিনা শহরে মহম্মদ ও তাঁর অনুগামীদের চালে যাওয়াটাকে আরবি ভাষায় হিজরত বলা হয়। পরবর্তীকালে ঐ সময়টিকে অনুসরণ করেই ইসলামি সাল গণনা শুরু করা হয় এবং তার নামকরণ করা হয় 'হিজরি'।প্রায় দশ বছরের মধ্যেই মহম্মদ সমস্ত বিস্তীর্ণ আরব ভূখণ্ড জুড়ে ধর্ম প্রচার করতে এবং ছড়িয়ে নিতে সচেষ্ট হয়।মক্কাতেও তাঁর ধর্মের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে, মক্কাবাসীরা অনুপ্রাণিত হয়ে, ইসলামি ধর্মে প্রভাবিত হয়। প্রায় ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিনি পরলোকে গমন করেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর প্রভাব এই ধর্মের গতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়ানি। ততদিনে এই ধর্ম ও তাঁর প্রভাব সমস্ত আরব ভূখণ্ড জুড়ে ভালোভাবেই ছড়িয়ে পড়েছিল।

টীকা লেখ 

কোরাণ ও কাবা :

আরবদেশের মক্কা শহরে খুব বড়ো আকারের কালো বর্ণের চৌকো আকৃতির পাথরকে বলা হয় কাবা। ইসলাম ধর্মপ্রচার হওয়ার আগে থেকেই কুরেশি নামক এক উপজাতির মানুষদের তীর্থক্ষেত্র ছিল কাবা। হজরত মহম্মদ সেই কুরেশি উপজাতির মানুষ ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে এই কাবা মুসলমানদের তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে

  কোরাণ হল মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, যার মধ্যে মহম্মদ ঈশ্বরের বাণীগুলিকে লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রত্যেকটি মুসলমান বিশ্বাস করেন যে কোরাণে আল্লার বাণীর প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ কোরাণের সমস্ত বাণী তারা আল্লার নির্দেশ ভেবে নিয়মানুসারে পালন করেন।

 ভারতের সঙ্গে ইসলামি ধর্মের সংযোগ:-



ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন

সিন্ধু প্রদেশে অভিযান করেন। ইতিমধ্যে আরব বণিক, ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা পূর্বেই ভারতে এসেছিলেন। অর্থাৎ ভারতের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের পরিচয় রাজ্যবিস্তারের পূর্বেই শুরু হয়েছিল।

আরবশক্তি সিন্ধু প্রদেশ ও ভারতের কিছু অঞ্চল নিজেদের করায়ত্ত করে। মহম্মদ বিন কাশেমের মৃত্যুর পর তারা ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে সরে গিয়ে নবম শতাব্দীর গোড়ার দিকে এরা ভারত অভিযান বন্ধ করে দেয়।

আরবদের পরে আরেক মুসলমান শক্তি তুর্কি ভারতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য ও ভারতের সম্পদের টানে ভারত আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। খ্রিস্টীয় একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীতে গজনির সুলতান মামুদ ও ঘুরের শাসক মহম্মদ ঘুরি, ভারত আক্রমণ করতে আসেন কিন্তু আসেন দুজন ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে। মহম্মদ ঘুরি আসেন শাসক হয়ে শাসন করার চিন্তাভাবনা নিয়ে। ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে তিনি রাজপুত রাজা তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত করেন। তাঁর পরিবর্তে তাঁর অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু কুতুবউদ্দিন আইবক ভারতের সিংহাসনে বসেন। অর্থাৎ তিনি প্রথম দিল্লিতে সলতানি শাসন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করেন।

গজনির সুলতান মাহমুদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মন্দিরগুলি থেকে সম্পদ লুঠ করে। খোরাসান এবং মধ্য এশিয়ার তার নিজের সাম্রাজ্যে ব্যয় করা। মহম্মদ প্রায় সতেরো বার অর্থাৎ আনুমানিক ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উত্তর ভারত আক্রমণ করেন।

খলিফা ও খিলাফৎ:

হয়রত মহম্মদের মৃত্যুর পর ইসলাম জগৎ নেতৃত্ববিহীন হয়ে পড়ে। ফলে সমস্ত ইসলাম অনুগামীরা নেতার অভাব অনুভব করতে থাকে, ফলে তাদের সমস্ত দিক থেকে এক সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। ফলে তার পরে ইসলাম জগতের নেতৃত্ব কে দেবে তা নিয়ে সকলের মনেই একটা প্রশ্ন উঠতে থাকে। তখন মহম্মদের প্রধান তার সঙ্গীরা একের পর এক মুসলমান তথা ইসলাম সব মানুষের নেতা হয়। এদেরকে বলা হয় 'খলিফা' 'খলিফা' শব্দটা আরবি শব্দ। এই খলিফা' শব্দের অর্থ হল প্রতিনিধি বা উত্তরাধিকারীপ্রথম খলিফা ছিলেন আবুবকর। খলিফাই হলেন ইসলাম জগতের নেতা অর্থাৎ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ও ধর্মীয় ক্ষেত্রেও। আর এই ইসলাম ধর্ম যে সব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেগুলিকে বলা হত সার-উল-ইসলাম। খলিফা এই পুরো দার-উল-ইসলামের প্রধান নেতা বলে ভাবা হত। তাঁর অধিকারের অঞ্চলের নাম দেওয়া হয়েছিল 'খিলাফৎ'। 

 গজনির সুলতান মামুদ বা মাহমুদ:

মামুষ ঠিক কতবার ভারত আক্রমণ করেছিলেন তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতানুযায়ী ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি সতেরোবার উত্তর ভারত আক্রমণ করেন। 

সুলতান মামুদ বারবার ভারত আক্রমণ করলেও, ভারত-ইতিহাসে এই আক্রমণের কোনো স্থায়ী প্রভাব ছিল বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন না। একমাত্র মুলতান ও পাঞ্জাব ছাড়া অন্য কোনো ভারতীয় অঞ্চলকে তিনি গজনির অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি।

মামুদের ভারত আক্রমণের ফলাফল: 

মামুদের ভারত আক্রমণের প্রত্যক্ষ ফল আকিস্মিক হলেও, কিছু পরোক্ষ প্রভাব ছিল বিশেষভাবে

উল্লেখযোগ্য।

প্রথমত, মামুদ বারবার ভারত আক্রমণ করে এদেশের উত্তর পশ্চিম সীমান্ডের প্রাকৃতিক নিরাপত্তাকে চুরমার করে দিয়েছিলেন। ফলে পরবর্তীকালে ওই পথ হতেই বিদেশি আক্রমণকারীরা ভারতবর্ষে ঢুকতে পেরেছে।

দ্বিতীয়ত, মামুদ ভারতবর্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ ধনসম্পত্তি লুঠ করায় ভারতের আর্থিক ভিত্তি যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। 

তৃতীয়ত, মামুদের আক্রমণের ফলে রাজনৈতিক দুর্বলতা ও সামরিক ত্রুটি বিদেশিদের কাছে ধরা পড়ে গিয়েছিল। একদিকে ভারতের সম্পদের লোভে, এনাদিকে ভারতীয়দের প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতার সুযোগে পরবর্তীকালে অন্যান্য শক্তিকে ভারত অভিযানে প্রলুব্ধ করেছিল

সুলতান মামুদ ভারতের ইতিহাসে একজন আক্রমণকারী হিসেবে পরিচিত হলেও, তিনি কেবল ভালো যোদ্ধাই নয়, তিনি যা সম্পদ ভারত থেকে লুঠ করেছিলেন তা তিনি নিজের রাজ্যের ভালো ভালো কাজে ব্যয় করেছিলেন।  তাঁর সময়কালে গজনি ও অন্যান্য অঞ্চলকে সুন্দরভাবে সজ্জিত করে তোলা হয়েছিল। মামুদ সেখানে প্রাসাদ, গ্রন্থাকার, মসজিদ, খালধার, বাগিচা, লেখার ইত্যাদি তৈরি করেন। তিনি আমুদরিয়া নদীর ওপর বাঁধও নির্মাণ করেন। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেন। সেই বিদ্যালয়ে যুদ্ধ শিক্ষকদের বেতন ও ছাত্রদের বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ ছিল। তাঁর আমলের দুজন উল্লেখযোগ্য পণ্ডিত হলেন আলবিরুণি ও ফিরদৌসি। আলবিরুনি ছিলেন দর্শন ও গণিত শাস্ত্রের পণ্ডিত। তিনি তহকিক্-ই-হিন্দ ও কিতাব-উল্‌-হিন্দ  এন্থটি রচনা করেন। যদিও তিনি ভারতে পর্যটক হিসেবেই এসেছিলেন। এছাড়াও পণ্ডিত ফেরদৌসও তার আমলের একটি উল্লেখযোগ্য লোক। তিনি শাহনামা' নামে একটি বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছিলেন।

 বাংলায় তুর্কি আক্রমণ :

আনুমানিক ১২০৪ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে বা ১২০৫ খ্রিস্টাব্দের শুরুর দিকে তুর্কীদের সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বখতিয়ার খলজি নদীয়া দখল করার পর থেকেই বাংলায় শুরু হয় তুর্কীদের সাম্রাজ্য। তুর্কীরা বিনা যুদ্ধেই নদীয়া জয় করেন। এরপর লক্ষ্মণ সেনের রাজধানী লক্ষ্মণাবতীকে অধিকার করে, নিজের রাজধানী বলে ঘোষণা করেন এবং বিভিন্ন মুসলমান ঐতিহাসিকগণ এই শহরকে 'লখনৌতি' বলে উল্লেখ করেন।

তুর্কি আক্রমণের প্রায় চল্লিশ বছর পরে এক ঐতিহাসিক নাম মিনহাজ-উস-সিরাজ বাংলায় এসে বখতিয়ার খলজির কাহিনিতে শুনেছিলেন যে এবং তাঁর লেখা তবকাত-ই-নসিবি নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, খলজি এবং তাঁর তুর্কি বাহিনী ঘোড়া ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে নদীয়ায় ঢুকেছিলেন। সে সময় বাংলা থেকে উত্তর দিকে ঘোড়ার ব্যাবসা চালু ছিল তিব্বত পর্যন্ত। কাজেই তুর্কিদের নদীয়ায় ঢুকতে দেখে কারোরই আক্রমণকারী হিসেবে ভাবার কোনো কারণই ছিল না। নদীয়া হয়তো তখন ভাগীরথীর তীরেই ছিল, যা এখন জলের অতলে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। অথবা বর্তমানে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার নৌদা নামক একটি গ্রামই হয়তো তখন নদীয়া নামে পরিচিত ছিল। সে যাই হোক, তুর্কি আক্রমণের সময় রাজা লক্ষ্মণসেন নদীয়া জেলায় উপস্থিত ছিলেন। শোনাযায় যে, বখতিয়ার খলজির সাথে মাত্র সাভোরজন সৈন্য ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে জানা যায় এই ধারণ সঠিক ছিল না। সেকালের উত্তর ভারত থেকে বাংলায় আসার সঠিক একাধিক রাস্তা ছিল। সাধারণত সকলেই বিহার থেকে বাংলায় প্রবেশের সময় রাজমহল পাহাড়ের উত্তর দিকের পথ ধরেই অসতো। রাজা লক্ষ্মণ সেনও ওই পথে  তুর্কি অক্রমণকে ঠেকানোর জন্যই প্রচুর সেন্য মোতায়েন করলেও, কিন্তু বাভিয়ার খলজি তার সেনাবাহিনীকে অনেকগুলি ছোটো ছোটো ভাগে বিভক্ত করে, বাড়তের দুর্গম অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করেছিলেন। লক্ষ্মণ সেন তুর্কিরা আসছে জেনেও কোনো প্রতিবাদ না করে পূর্ববঙ্গের দিকে চলে যান।

            ফলে তুর্কিরা বিনা বাধায়, বিনা পরিশ্রমেই নদীয়া জয় করেন। বখতিয়ার খলজি নিজের নতুন রাজ্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে, প্রত্যেকটি ভাগে একজন করে শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। এই অঞ্চলে তিনি যে-সকল শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন তারা প্রত্যেকেই ছিল তার সেনাপতি। বখতিয়ার খলজি লখনৌতিতে মসজিদ, মাদ্রাসা এবং সুফি সাধকদের বসবাসকেন্দ্র স্থাপন করে দেন। তাঁর রাজ্যের সীমানা ছিল উত্তরে দিনাজপুর জেলার দেবকোট থেকে রংপুর শহর, দক্ষিণে পদ্মা নদী, পূর্বে তিস্তা নদী ও করতোয়া নদী এবং পশ্চিমে বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এরপর তিনি তিব্বত অক্রমণ করলেও রাজ্যবিস্তার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি বললেই চলে। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা যান। বাংলায় তুর্কি অভিযানের একটা অধ্যায় শেষ। এই সময়ে বাংলার সেন বংশেরও অবসান ঘটেছিল বলে মনে করা হয়।

রাজপুত: 

উত্তর ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে বাঁধের কথা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে প্রায় বরংবার তারাই ইতিহাসে বাজপুত নামে পরিচিত ছিল। রাজপুতরা আসলে কোথা থেকে এসেছে তাদের আসল বংশ পরিচয় নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেক মতভেদ থাকলেও, খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের দিকে হুনাদের আক্রমণের বেশ পরে, কিছু মধ্য এশীয় উপজাতির মানুষ এসে উত্তর পশ্চিম ভারতে বসবাস করতে শুরু করতে থাকে। স্থানীয় লোকদের সঙ্গে এদের বৈবাহিক সম্পর্কও তৈরি হয়। এদেরই বংশধরদের বলা হয়ে থাকে রাজপুত। তবে রাজপুতরা নিজেদেরকে স্থানীয় ক্ষত্রিয় বলে মনে করত। নিজেদেরকে চন্দ্র, সূর্য বা অগ্নিদেবতার বংশধর বলে সকালের সামনে তুলে ধরার চেষ্টাও করত।

 ভারতের অর্থনীতি খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক –

আমরা এই অংশেই খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়কালে বিশেষ করে অর্থনীতি সম্পর্কিত কথা নিয়ে আলোচনা করব। এই সময় দক্ষিণ ভারত, পাল ও সেন রাজাদের আমলে বাংলার অর্থনীতি কেমন ছিল তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করে যথাযথ সিদ্ধান্তে উপনীত হব। সপ্তম শতক থেকেই উত্তর ভারতের বেশ কিছু জায়গায় ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মন্দা দেখা দিয়েছিল আর এই অবস্থার কথা অর্থাৎ নগরগুলির এইরুপ খারাপ অবস্থার কথা আমরা জানতে পারি সেই সময়কার পর্যটকদের কাছ থেকে। তাদের মতে নগর, শহর ও বাণিজ্যপথের গুরুত্বও কমে গিয়েছিল কিন্তু তার মানে এই নয় যে নতুন কোনো বাণিজ্যপথ বা শহর সেখানে গড়ে ওঠেনি। হিউয়েন সাঙ তার বিবরণীতে থানেশ্বর, কনৌজ ও বারানসীতে ব্যবসায়িক কাজকর্মের রমরমার কথা উল্লেখ করেছেন। আবার সেই সময়ে প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবেও এই শহরদুটির গুরুত্ব কম ছিল না বরং বিশাল গুরুত্ব ছিল বলে মনে করা হয়। আবার বন্দরগুলির এবং বন্দর সন্নিহিত নগরীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, বরং নবম শতাব্দী থেকে আরব বণিকদের যাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় বহির্বাণিজোরও প্রভূত উন্নতি হতে শুরু করে।গ্ৰামীণ বাজারে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য শস্য বেচাকেনা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এসময় পণ্যজাত দ্রব্য কেনার জন্য বা ক্রয়বিক্রয়ের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা প্রচলিত ছিল তা আমরা অনেকেই পূর্বেই জেনেছি, কিন্তু স্বর্ণমুদ্রা বা রৌপ্যমুদ্রাগুলি ভালো মানের পাওয়া যেত না বললেই চলে। তবে সমকালীন গ্রন্থগুলিতে এরুপ প্রচুর মূদ্রার নাম পাওয়া গেলেও, সেগুলি বাজারে কতটা চলত, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানা সম্ভব হয়নি। 

দক্ষিণ ভারতের অর্থনীতি :

দক্ষিণ ভারতের অর্থনীতির কেন্দ্র হল রাজশক্তি, আর এই রাজশক্তিগুলিই দক্ষিণ ভারতে প্রচুর মন্দির তৈরি করেছিল। সেগুলি শুধুমাত্র পূজা বা অর্ধনার জন্যই ব্যবহৃত হত না। এই মন্দিরগুলিকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল লোকালয় বা বসতি। এছাড়াও এই মন্দিরগুলো ঘিরে তৈরি হয়েছিল শিল্পীদের বসবাস। তাখোর এবং গঙ্গাই কোন্ড চোল পুরমে চোল রাজা রাজবাজ এবং রাজেন্দ্রর সময় অসাধারণ দুটি মন্দির নির্মিত হয়। মন্দিরের কর্তৃপক্ষকে রাজা ও সহানীয় অর্থসম্পন্ন লোকেরা নিষ্করজমি প্রদান করত। সেই জমিতে উৎপাদিত ফসল মন্দির ও মন্দিরকে ঘিরে বেড়ে ওঠা লোকেদের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কাজে লেগে যেত। পুরোহিত, মালাকার,সঙ্গীতজ্ঞ, নর্তক-নর্তকী, রাঁধুনি প্রভৃতি কাজে লিপ্ত মানুষেরা মন্দিরের চত্বরে থাকত। এই চোল রাজ্যের ব্রোঞ্জ হস্তশিল্প ছিল খুবই বিখ্যাত। তামিলনাড়ুর অঞ্চলে কাবেরী ও তার শাখানদীগুলি থেকে খাল কেটে সেচ ব্যবস্থায় উন্নতি করা হয়। ফলে উৎপাদনও বাড়ে, কোথাও বছরে দুবার ফল ফলানোও সম্ভব হয়। যেখানে সেচের  সুযোগ ও সুবিধা কম ছিল, সেখানে বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য পুকুর বা খাল কাটা হত। কোথাও কোথাও কুয়োর ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।

চোল রাজ্যের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম প্রধান ছিলেন রাজ্যের রাজা। তাঁকে মন্ত্রীর এক দল বা পরিষদ সহায়তা করত। কয়েকটি রাজ্যকে কয়েকটি প্রদেশ বা মণ্ডলমে বিভক্ত করা হয়েছিল। কৃষকদের বসতিকে ঘিরে গড়ে ওঠা গ্রামকে শাসন করত 'গ্রাম পরিষদ'। গ্রাম পরিষদ' 'উর' নামেও পরিচিত ছিল। এই রকম কয়েকটি গ্রামকে নিয়ে গঠিত হত ‘নাড়ু’। 'উর' এবং 'নড়ু' – এই দুই স্থানীয় সভা স্বায়ত্তশসন, বিচার এবং রাজস্ব সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করত। ব্রাহ্মণদের ব্রহ্মদেয় জমি দেবার ফলে কাবেরী উপত্যকায় ব্রহণ সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে বহু নতুন নতুন গ্রামের সৃষ্টি হয়েছিল। এই সৃষ্ট হওয়া নতুন গ্রামগুলিকে তদারকি বা পরিচালনা করার জন্য বয়স্ক মানুষদের নিয়ে গঠন করে ছিলেন 'সভা"। তারা সাধারণত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করত। ব্যবসায়ীদের জন্য এবং বিভিন্ন নানারকম সমস্যার মোকাবিলার জন্য 'নগরম' নামের আরেকটি পরিষদ তৈরি হয়েছিল।

দক্ষিণ ভারতের ক্ষেত্রে নাম থেকে একাদশ শতকের মধ্যে বাণিজ্যের উন্নতি লক্ষ্য করা গেলেও, বিভিন্ন লেখকের লেখনী থেকে জানা যায় যে, চেট্টি বা বণিকরা পণ্য সালিয়ে যাতায়াত করত বাণিজ্য সূত্রে। এই সময় বিভিন্ন বণিক সংগঠন বা সমবায়ের কথাও জানা যায়। এই সংগঠনগুলি বিভিন্ন ধরনের মন্দিরকে জমি দান করত। নিষ্কর জমি, সেই জমির বর্ণনা ভারতের তাম্রলেখগুলিতে পাওয়া যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চোলদের রাজত্ব বেড়ে যাওয়ায়, তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তির ফারেল, ভারতীয় বণিকদের প্রভাবও তাদের বণিজ্যের ওপর বৃদ্ধি পায়।

এই সময়কর বাজার অনেকেই উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন উপাধিতে নিলেদেরকে অলংকৃত করত। যেমন মহারাজাধিরাজ, চক্রবর্তী, ত্রিভূবন চক্রবর্তীন ইত্যাদি। এদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের ক্ষমতা ধনী কৃষক, ব্যবসায়ী এবং ব্রাহ্মণদের সঙ্গে ভাগ করে নিতেন। ভূমি রাজস্ব ছাড়াও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর আদায় করা হত। কৃষক, 'পশুপালক এবং কারিগরদের উৎপাদন থেকে লাভের অংশ রাজা ভাগ করে নিতেন। ফলে তখন থেকেই রাজারা বিলাসবহুল ও আরামপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। এরা এই অর্জিত অর্থকে দুর্গ এবং মন্দির বানানোয়, সৈন্য বাহিনীর দেখাশোনার জন্য ব্যয় করত।

স্থানীয় পরিবারগুলো যারা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তাদের হাতেই খাশুনার দায়িত্বভার সঁপে দেওয়া হত। খাজনার একটি ভাগ ওই পরিবার নিজেদের জন্য রেখে বাকি রাজ কোষাগারে জমা করে দিত। কৃষিজমির পরিমাণ বড়ানোর জন্য এরা ব্রাহ্মণদের জমি দান করতো। এরা দল পরিষ্কার করে এবং অনাবাদী জমি পরিষ্কার করে বসতি তৈরি করতেন। ব্রাহ্মণদেরকে নিষ্কর জমি দান করা হত। এই জমি দান করার ব্যবস্থাকে ব্রাম্মদেয় ব্যবস্থা বলা হত। কারণ এই জমিগুলি ব্রাহণদেরকে দান করা হত।

 ভারতের সামন্তব্যবস্থা :

এই সময় ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোকে কেন্দ্র করে সমাজব্যবস্থা চারভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সবথেকে নীচের স্তরে থাকে নীচু তলার মানুষ। তার ওপরের স্তরে থাকে জমিদার ও মালিক শ্রেণির লোকজন, যারা জমির ওপর নিজেদের মালিকানা চালাত। আবার এদের মধ্যে আরেক ধাপ উঁচুতে থাকত রাজসামন্তরা, যারা রাজার বেতনভুক্ত কর্মচারি ছিল। কিন্তু বেতনের পরিবর্তে তারা জমি পেত। আর এদের ওপরের স্তরে ছিলেন সব কর্তৃত্বের অধিকারী রাজ। অনেক সময় যুদ্ধে হেরে যাওয়া রাজারাও তার জমির অধিকার ভোগ করত।

পাল ও সেন যুগের বাংলার ধনসম্পদ ও অর্থনীতি:

 পাল ও সেন যুগের অর্থনীতির অধিকাংশই ছিল কৃষিনির্ভর। এই সময়ে বণিকদের প্রাধান্য কমতে শুরু করে।ফলে বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হয়ে পড়ে। পাল ও সেন যুগের কৃষকেরা তাদের উৎপন্ন ফসলের ১/৬ অংশ কর হিসেবে দিত। এছাড়াও ফল, ফুল, কাঠও কর হিসেবে রাজাদের আয়েসের জন্য দিত। 

সোনা রুপার মুন্নার ব্যবহার কমে গিয়েছিল বললেই চলে। এই যুগের প্রধান উৎপাদিত ফসল ধান, সরষে ও নানা ধরনের ফল যেমন আম, কলা, কাঁঠাল, ডালিম, ডুমুর, খেজুর, নারকেল ইত্যাদি। এছাড়াও তুলো,পান, সুপারি, এলাচ, মহুয়া ইত্যাদি উৎপন্ন হত। আরেকটি উৎপাদিত সামগ্রি ছিল মাছ। প্রাণীর মধ্যে ঘোড়া ও উট বাইরে থেকে এসেছিল।

তখনকার বাঙালির খাওয়াদাওয়া :

ধান প্রধান ফসল হওয়ায়, তৎকালীন বাঙগুলির ভাতই হল প্রধান পন্য। ভাতের সাথে ঘি, মৌরালা মাছ, শাক (পাট), দুধ, কলা, সবজিতে বেগুন, লাউ, কুমড়ো, ঝিঙে, কাঁকরোল, ডুমুর, কচু ইত্যাদি খাওয়া হত।মাছের মধ্যে রুই, পুঁটি, মৌরালা, শোল ও ইলিশ। এছাড়াও অনেকেই সে সময়ে হরিণ, ছাগল ও নানা রকম পাখি ও কচ্ছপের মাংস, কাঁকড়া, শামুক, শুকনো মাছ ইত্যাদি খেত। পরে পর্তুগিজদের কাছ থেকে বাঙালিরা আলু খেতে শেখে। মিস্টমর মধ্যে এরা আখের গুড়, দুধ থেকে তৈরি পায়েস, দই, ক্ষীর ছিল প্রতিদিনের খাদ্যবস্তু। আর নেশাজাতীয় পানীয়ের মধ্যে মহুয়া ও আখ থেকে তৈরি পানীয়ও প্রচলিত ছিল।


আরও পড়ুন সুলতান শাসন নিয়ে বাছাইকৃত ১০০ টি প্রশ্ন

মন্তব্যসমূহ