দিল্লি সুলতানি তুর্কো আফগান শাসন । চতুর্থ অধ্যায় । প্রশ্ন উত্তর WBBSE Class 7 History Chapter 4 question answer

দিল্লি সুলতানি তুর্কো আফগান শাসন

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় দিল্লি সুলতানি প্রশ্ন উত্তর

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় দিল্লি সুলতানি প্রশ্ন উত্তর

 


 ১.নীচের নামগুলির মধ্যে কোনটি বাকিগুলির সঙ্গে মিলছে না তার তলায় দাগ দাও:         পূর্ণমান-১

ক। ইলতুতমিশ, রাজিয়া, ইবন-বতুতা, বলবন,

উঃ ইবন-বতুতা। 

খ। তাবারহিন্দ, সুনামা, সামানা, বিলম,

উঃ ঝিলম। 

গ। খরাজ, মা, ভিডিয়া, তামিং, জাকাত,

উঃ আমির। 

ঘ। আহমেদনগর, বিজাপুর, গোলকোল্ডা, পাহার, বিদর।

উঃ পাঞ্জাব। 

ঙ। বারবোসা, মামূদ, গাওয়ান, পায়েজ, নুনিজ।

উঃ মামুদ গাওয়ান। 

২. 'ক' স্তম্ভের সঙ্গে 'খ' স্তম্ভ নিয়ে লেখো      পূর্ণমান-১

ক স্তম্ভ

খলিফা

বলবন

খলজি বিপ্লব

রুমিকৌশল

রাজা গণেশ

খ স্তম্ভ

বাংলা

দুরবাশ

বাবর

তুর্কান ই-চিহলগানি

ইলবার তুর্কি অভিজাতদের ক্ষমতার অবসান

উঃ ক স্তম্ভ

খলিফা

খলী বিপ্লব

ভূমিকৌশল

রাজা গনেশ

খ স্তম্ভ

দুরবাশ

তুর্কান -ই চিহলগানি

ইলবার তুর্কি অভিজাতনের ক্ষমতার অবসান

বাবর

বাংলা


৩. সংক্ষেপে (৩০-৫০টি) শব্দের মধ্যে উত্তর দাওঃ

পূর্ণমান-৩

ক) দিল্লির সুলতানদের কখন খলিফাদের অনুমোদন দরকার হতো?

উঃ খলিফা হলো সুলতানদের ইসলাম ধর্ম অনুসারে যে একজনই প্রধান শাসক তাকে বলা হতো খলিফা। খলিফা ছিলো ইসলামের আওতার মধ্যে তাদের যত অঞ্চল ছিল, সেই অঞ্চলের প্রধান বা মূল শাসক ছিলো খলিফা, দিল্লির সুলতানদের উপরে উপরে যাদের অধিকার ছিলো তারা হলো খলিফা কারণ- এই খলিফারাই ছিলো মুসলমানদের ধর্ম গুরু। দেশ জুড়ে মুসলিম সম্প্রদায় এক বিশাল অঞ্চল শাসন করতেন, আর এতো বড়ো অঞ্চল একজন খলিফার দ্বারা সমস্ত অঞ্চল শাসন করা শ্বাসন করা কখনো সম্ভব হতো না। তাই এই অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য খলিফার অনুমোদন নিয়ে নানান ব্যক্তি নানান অঞ্চলে শাসন করে চলতেন, সুলতান নামে ভারতবর্ষের মুসলিম শাসককেরা পরিচিত ছিলেন। সুলতানেরা খলিফাদের যে খুব মেনে চলতেন এই ধারনাটা ভুল। তারা খলিফাদের মেনে চলতো কারণ যখন তাদের মধ্যে কে সুলতান হবে বা কে এই এই সুলতান হওয়ার জন্য যোগ্য তা নিয়ে খুব গোলমাল বা ঝামেলা হয়ে উঠতো আর তখন প্রকৃত সুলতান নির্বাচিত করার জন্য খলিফাদের মতামত বা অনুমোদনের প্রয়োজন হতো, খলিফাদের নির্বাচনের একটি সম্মান ছিলো, তাই খলিফারা যাকে নির্বাচিত করে দিতেন তাকেই সুলতান হিসাবে সম্মান করা হতো। তাদের এই সিল্পান্তকে কেউ অস্বিকার করতে না, বা সাহস করতেন না, কারণ খলিফাদের একটা সম্মান ছিলো মুসলমানদের কাছে।

খ) সুলতান ইলতুৎমিসের সামনে প্রধান তিনটি সমস্যা কী ছিল?

উঃ দিল্লির সুলতান ইলতুৎ মিসের সামনে যে প্রধান তিনটি সমস্যা ছিল সেটি হলোঃ

১) যখন তিনি সুলতান হলেন তখন সাম্রাজ্যের মধ্যে অনেকেই তাকে মানতে চাইছিলেন না। তখন তিনি কিভাবে বিদ্রোহী শক্তি গুলোকে ধ্বংস করতে পারবেন, এই সমস্যা সমাধান করবেন তা নিয়ে তিনি ভাবতেন।

২) সুলতান ইলতুৎমিসের সামনে দ্বিতীয় সমস্যাটি হলো যে সেই সময় এশিয়ার দুর্ধর্ষ মোঙ্গল শক্তি ছিলো তার কাছে খুব বড়ো একটা কারণ, আর এই দুর্ধর্ষ মোঙ্গল শক্তিকে তিনি কিভাবে মোকাবিলা করবেন তার কাছে ছিল বড়ো একটা সমস্যা।

৩) সুলতান ইলতুমিসের তৃতীয় সমস্যাটি হলে তিনি একটা রাজবংশ তৈরি করে যেতে চান তার মৃত্যুর পরে তার উত্তরাধিকারী কোন গোলমাল ছাড়াই ভবিষ্যতে তার সিংহাসনে বসতে পারে। এই তিনটি মূল কারণ ছিল তার কাছে।

গ) কারা ছিল সুলতান রাজিয়ার সমর্থক? কারা ছিল তার বিরোধী?

উঃ ইলতুৎ মিসের সনতানদের মধ্যে রাজিয়া ছিলেন সুলতান হওয়ার যোগ, তিনি ছিলেন ইলতুতমিশের সার্থক উত্তরাধিকারী। রাজিয়ার সুলতান হওয়ার আগে ইলতুত মিসের অন্য এক ছেলে কিছুদিনের শ্বাসন করেছিলো কিন্তু সার্থক উত্তরাধিকারী হিসাবে রাজিয়াকেই সুলতান করা হয়। রাজিয়া সুলতান হওয়াতে অনেকে সমর্থন আবার অনেকে বিরুদ্ধ ও করেছেন। যেমন তার সুলতান হওয়া নিয়ে সমর্থন করেছিলেন সেনাবাহিনী, অভিজাত একাংশ ও দিল্লির সাধারন মানুষেরা।

রাজিয়ার সুলতান হওয়াকে বিরুদ্ধ করেছিলেন 'তুর্কি' অভিজাতরা। 'তুর্কি' অভিজাতরা মনে করেছিলেন যে রাজিয়া অ-'তুর্কি' অভিজাতদের বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাই তারা রাজিয়াকে সুলতান হিসাবে অসমর্থন করেন,সুলতান ইলতুতমিসের উত্তরাধিকারী রাজিয়া কিছুউ বিদ্রোহ দমন করলেও যে মাত্র সাড়ে তিন বছরের বেশি শ্বাসন করতে পারে নি।

(ঘ) আলাউদ্দিন খলজী কীভাবে মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবিলা করেন ?

উঃ আলাউদ্দিন খলজী যখন সুলতান হন (১২৯৯-১৩০০ খ্রিঃ এবং ১৩০২–১৩০৩ খ্রিঃ) এবং মোগল আক্রমনকে প্রতিরোধ করার জন্য সুলতান আলাউদ্দিন খলজী বিরাট সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেন। তার গড়ে োনলা সৈনিকদের থাকার জন্য সিড়ি নামে একটি শহর তৈরি করে। তার তৈরি করা সৈন্যদের রসদ জোগানোর জন্য তিনি দেয়ার অঞ্চলের কৃষকদের বেশি হারে কর চাপান। দূর্গ নির্মান, সৈন্য সংগ্রহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে সফলভাবে আলাউদ্দিন খলজী মোগল আক্রমনের মোকাবিলা করেন।

ঙ) ইলিয়াদশাহি এবং হোসেন শাহি আমলে বাংলার সংস্কৃতির পরিচয় দাও।

উঃ বাংলার সংস্কৃতির উন্নতি হয়েছিলো ইলিয়াসশাহী এবং হোসেনশাহী আমলে। সুলতান ইলিয়াসশাহী সমস্ত ধর্মকে শ্রদ্ধা করতেন এবং তিনি ছিলেন সব ধর্মের জন্য উদার মনের। তার এই উদার মনের জন্য বাংলার সর ধর্মের মানুষকে কাছে আসতে সাহায্য করেছিলো। তার শাসনকালের সময় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য স্থাপত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়। শোনা যায় যে, হোসেনশাহ ছিলেন শ্রীচৈতন্যের ভক্ত। সাধারণ মানুষ নাকি হোসেনশাহকে কৃষ্ণের অবতার বলে মনে করতেন। বাংলা ভাষা চর্চায় ভিষন উৎসাহী ছিলেন। হোসেনশাহ তাঁর শাসনকালে বাংলা ভাষায় লেখালেখির চর্চা উন্নত হয়।

৪. বিশদে (১০০-১২০টি) শব্দের মধ্যে উত্তর দাওঃ-

পূর্ণমান -৫

ক) মানচিত্র থেকে আগউদ্দিনের দাক্ষিণাতা অভিধানের বিবরণ দাও।

উঃ প্রথম সুলতান যিনি দক্ষিণ ভারতে সুলতানি সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান, তিনি হলেন সুলতান আলাউদ্দিন খলজি তার এই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁর সেনাপতি মাজিক কাফুর। সেনাপতি মালিকাফুরের নেতৃত্বে সুলতান ১৩০৩ খ্রিঃ খাণ্ডু ৬৭ করেন। থাভু জয়ের পর ১৩১১খ্রিঃ দেবগিরি অধিকার করেন, তার সাথে এই একই বছরে সুলতান বরঙ্গল জয় করেন। তার পর তিনি আস্তে আস্তে এক এক করে হোয়গল ও অতীর নিজের দখলে করে নেন। তার পর তার সেনাপতি কাকুরের সাহায্যের ফলে তার দখলে আসে ঘর সমুদ্র। সুলতানের সৈন্যদল তাঞ্জোরকে জয়করেন। সব শেষে আলাউদিত মানুবাই এবং পাণ্ড্য জয় করে তার দক্ষিণাত্য অভিযান শেষ করেন এবং ভারত মহাসাগরের সীমানা অবধি সুলতানের রাজ্য বিস্তৃত হয়।

খ) দিল্লির সুলতানদের সঙ্গে তাঁদের অভিজাতদের তেমন সম্বন্ধ ছিল তা লেখো।

উঃ দিল্লির সুলতানদের সঙ্গে অভিজাতদের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। দিল্লির সুলতান বা রাজ্য শাসন করার জন্য মুসলিম শাসকদের অভিজাতদের সমর্থনের প্রয়োজন ছিল। অভিজাতন্ত্রের সমর্থন ছাড়া যদি কেউ সুলতান হওয়ার জন্য সিংহাসন দখল করতে চাইতো তাহলে তাকে সিংহাসন থেকে বিতাড়িত করা হতো। উপহরণ হিসাবে মূলতান রাজিয়া জনসাধারণ এবং সেনাবাহিনীর সমর্থন ছিলো না তার সুলতান হওয়া নিয়ে, এর জন্য তিনি বেশি দিন তার শাসনকাল চালাতে পারেননি এবং তাকে খুব তাড়াতাড়ি তার সিংহাসন ছাড়তে হয়েছিলো। তাই কোন সুলতান রাজ্য শাসন করার জন্য অভিজাতদের সমর্থনের প্রয়োজন হতো।

(গ) ইকতা কী? কেন সুলতানরা ইকতা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন?

উত্তর। দিল্লির সুলতান সাম্রাজ্যের সীমানা ক্রমশ বৃদ্ধি করেছিলেন। নতুন অধিকার করা অঞ্চল থেকে রাজস্ব আদায় ও শান্তি বজায় রাখার দরকার ছিল। সুলতানরা যেসব রাজ্য জয় করলেন সেই রাজ্যগুলি এক একটা প্রদেশের মতো ধরে নেওয়া হল। এই প্রদেশগুলিকেই বলা হত ইকতা।

মধ্য এশিয়ায় ইসলামীয় সাম্রাজ্যে সামরিক অভিজ্ঞাতদের ইকতা দেওয়া হত। এই ইকতাগুলি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে দেওয়া হত। নবম শতকে এই ব্যবস্থার উৎপত্তি হয়। রাজাকাশে তখন যথেষ্ট পরিমাণে রাজস্ব জমা পড়ছিল না। এদিকে যুদ্ধ করেও তেমন ধনসম্পদ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই সামরিক নেতাদের বেতনের বদলে ইকতা দেওয়া হতে থাকে। একাদশ শতকে সেলুজক তুর্কি সাম্রাজ্যে ইকতা ব্যবস্থার প্রচলন লক্ষ করা যায়। এই সময়ে সাম্রাজ্যের প্রায় অর্ধেক অংশ ইকতা হিসেবে ভাগ করা হয়। কোথাও কোথাও এই ব্যবস্থা বংশানুক্রমিক হয়ে যায়।

(ঘ) আলাউদ্দিনের সময় দিল্লির বাজারদর নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তোমার মতামত লেখো।

উত্তর। রাজকোশের আয় বাড়াতে আলাউদ্দিন খলজি কতগুলি অর্থনৈতিক সংস্কার করেন। আলাউদ্দিন বাজারের সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঠিক করে দেন। বাজারদর তদারকির জন্য ‘শাহানা-ই-মাণ্ডি’ ও ‘দেওয়ান-ই-রিয়াসং' নামে রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন। সুলতানের ঠিক করে দেওয়া দামের থেকে বেশি দাম নিলে বা ক্রেতাকে ওজনে ঠকালে কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। আলাউদ্দিন রেশন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। প্রয়োজনের সময়ে প্রজাদের সুলতানের পক্ষ থেকে খাদ্যশস্য ও রোজের প্রয়োজনীয় জিনিস পরিমাণ মতো জোগান দেওয়া হত। অলাউদ্দিনের ওই ব্যবস্থা একদমই সঠিক। তৎকালীন যুগে কোনো সুলতানের পক্ষে এই ধরনের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত আশা করা যায় না।

ঙ) বিজয়নগর ও দাক্ষিঙ্খাত্যের সুলতানি রাজ্য গুলির মধ্যে সংঘর্ষকে তুমি কি একটি ধর্মীয় লড়াই বলবে? তোমার যুক্তি দাও। 

উঃ বিজয়নগর ও দাক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যগুলির মধ্যে সংঘর্ষকে ধর্মীয় লড়াই বলা হয়। নানা কারণে ধর্ম নিয়ে বিজয়নগর ও দাক্ষিণাত্যের মধ্যে যুদ্ধ লাগে নি। যুদ্ধ হয়েছিল প্রধানত রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, সামাজিক অর্থনৈতিক ক্ষমতার প্রতিষ্ঠার জন্য, প্রথম থেকেই এই দুই সাম্রাঙ্গের মধ্যে লড়াই লোগছিল। কৃষ্ণদেব রায় ছিলেন বিজয়নগরের শাসক। তার রাজত্ব কালে বিজয়নগর অনেক উন্নতি করেছিল বা তার গৌরব চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে দিয়েছিলেন কৃষ্ণ দেব রায়। ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগর রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয় এবং ১৩৪৭ সালে দক্ষিণাত্যে বাহমনি রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়।আলাউদ্দিন হাসান বাহমান শাহ কৃষ্ণদেবের মৃত্যুর পর ভুলুভ রাজত্বকালেই বিজয়নগরের সাথে সুলতানদের যুদ্ধ বাঁধে। এই যুদ্ধে বিজনগরের পরাজয় ঘটে। আলাউদ্দীন খলজী ছিলেন দক্ষিণাত্যের নেতা এবং সেনাপতি ছিলেন মালিক কাফুর।লোদী সুলতান দের ক্ষমতা বেশি বেড়ে যায়। বিজ্ঞানগর ও দক্ষিণাত্যের সুলতানদের সঙ্গে আগাগোড়াই প্রতিবন্ধী তা ছিল আর এই প্রতিদ্বন্দ্বীতার কারণেই যুদ্ধ বা লড়াই বাধে। সুতরাং এটাকে কেবল ধর্মীয় যুদ্ধ বা যায় না।

৫. কল্পনা করে লেখো (১০০ – ১৫০ টি) শব্দের মধ্যে।           পূর্ণমান-৮

ক) যদি তুমি সুলতান আলাউদ্দিন খলজির সময় দিল্লির একটি বাজারে যেতে তাহলে কেমন হতো তা লেখো।

উঃ আমি যদি সুলতান আলাউদ্দীন খলজির শাসনকালের এক ব্যক্তি হয়ে দিল্লির একটি বাজারে যেতাম তাহলে দেখতে পেতাম যে বাজারের বিক্রেতারা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সঠিক দাম নিচ্ছেন যেই দামটি রা তাদের ধার্য করে দিয়েছেন। তার বাইরে বিক্রেতারা ক্রেতাদের থেকে এক পয়সা কম বা বেশি নিচ্ছে না। বাজারের সব দোকানেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের একই দাম নেওয়া হচ্ছে। সুলতানের আদেশ অনুযায়ী 'শাহানা-ই-শন্তি' ও ‘দেয়ান -ই রিয়াসভ' নামে দুই কর্মচারীরা বাজারে টহল দারী করছে। তারা বাজারে ঘুরে ঘুরে দেখছে যে কোন দোকানদার সমস্ত জিনিসের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার মূল্যেই নিচ্ছে বা নিচ্ছে কি না। কেউ যদি কোন রকম অসাধুতার আশ্রয় নিচ্ছে তাকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করছেন সুলতানের রাজ কর্মচারীরা। শুধু তাই নয় আরো দেখতে পেতাম যে কোন দোকানদার যদি কোন ক্রেতাকে ওজনে ঠকাবার চেষ্টা করেছে, তাহলে তাকে কঠোর শাস্তির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। এই নিয়ম এবং বাজারের দৃশ্য দেখে খুব ভালো লাগতো।

খ) মনে করো তুমি আলাউদিন হুসেন শাহের দরবারে একজন রাজকর্মচারী। সে যুগের ধর্মীয় অবস্থা সম্বন্ধে যদি তুমি একটা বই লিখতে তাতে কী লিখতে?

উঃ আমি যদি আলাউদ্দিন হুসেন শাহের দরবারে একজন রাজকর্মচারী হতাম তাহলে আমার ইচ্ছা হতো হুসেন শাহের রাজ্যে ধর্মীয় অবস্থা সম্বন্ধে একটা বই লিখতে, এবং সেই বইতে হুসেন শাহ রাজ্যে বিখ্যাত তাঁর উদার ধর্মীয় নীতির কথা লিখতোম। হুসেন শাহ শাসনকালের সময় হিন্দুদের কোন ধর্মীয় সংকীর্ণতার জালে আবদ্ধ না রেখে দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ। হুসেন শাহের উজির প্রধান চিকিৎসক, তাঁর প্রধান দেহরক্ষী,টাকশালের অধ্যক্ষ সবই ছিলো হিন্দু। তখনকার সময় একজন মুসলিম শাসকের রাজদরবারে অবিশ্বাস যোগ্য।সুলতান সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করতেন উদার মনে। তার এই উদার মনের জন্য সব মানুষকে একত্রিত করতে সাহায্য করেছিল। শোনা যায় তিনি শ্রী চৈত্যন্যের ভক্ত ছিলেন। তার শাসনকালে সাধারণ মানুষ তাকে কৃষ্ণের অবতার বঙ্গে মনে করে।

গ) মনে করো রাজল দ্বিতীয় সেরায়ের আমলে পোর্তুগাল থেকে বিজয়নগর বেড়াতে এসেছো, এ দেশের অবস্থা দেখে তুমি নিজের দেশের বন্ধুকে চিঠিতে কী লিখবে?

উঃ প্রিয় রাজা,

অনেকদিন থেকেই তোর কথা খুব মনে পড়ছে আমার। আজ সাত মাস আমরা আমাদের দেশ ছেড়ে ভারতে এসেছি । ভারতে এসে তোকে খুব মনে পড়ছে তাই আজ এই চিঠিটা লিখছি।

আমি ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় ঘুরালাম এই ৭মাস। ভারতের সব রাজ্যও আমার ভালো লেগেছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে অজয়নগর শহরটি দেখে। এই শহরটি ঠিক রোম শহরের মতো সুন্দর ও বড়ো।এই শহরের বাড়ি গুলি সুন্দর বাগান দিয়ে ঘেরা এবং বাগানের মধ্যে অনেক গাছের কুঞ্জ আছে আর শুধু বাড়িগুলি নয়, নগরটিও সুন্দর বাগানে ঘেরা। এই শহরের মাঝখান দিয়ে অনেকগুলি পরিস্কার জলের খাল বয়ে গেছে। শহরের মাঝে মাঝে নির্মী আছে এবং রাজপ্রসাদের কাছে আছে তালবন এবং অনান্য ফলের গাছ। নগরটিতে মানুষ বাস করেন। রাস্তায় ও গলি গুলিতে এতো লোক ও হাতি চলাচল করে যে সেই ভীড়ের মধ্য দিয়ে অশ্বারোহী বা পদাতিক সৈন্য যেতে পারে না। এই শহরের কৃষি খুব উন্নত, তাই এদেশের মতো এতো খাওয়া প্রার ব্যবস্থা পৃথিবীর অন্য কোন শহরে নেই। এই নগরে চাল, গম ও অনান্য শস্য-প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। রাস্তায় ও বাজারে ভারবাহী এত ষাঁড় চলাচল করে যে তাদের মধ্য দিয়ে যাওয়া যায় না। তাদের অপেক্ষা করতে হয় বা অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে যেতে হয়। এই শহরটি দেখে মনে হয় এটি খুব ধনী শহর।

আজ এখানেই শেষ করছি। আর কিছু দিন পর নিজের দেশে ফিরে যাবো। তোরা ভালো থাকিস।

ইতি তোর বন্ধু রিমা

অতিরিক্ত প্রশ্ন ও উত্তর

(ক) সঠিক শব্দটি বেছে নিয়ে শুন্যস্থান পূরণ করো :

(১) মারা গেলে তাঁর জয় করা রাজ্যগুলি ভাগ হয়ে যায়। -- তার চার জন অনুচরের মধ্যে। (মহম্মদ

ঘুরি / তাজউদ্দিন ইয়ালদুজ)।

উত্তর। মহম্মদ ঘুরি।

(২) লাহোর ও দিল্লির অধিকার থাকে _ থাকে কার হাতে। (খলিফা/কুতুবউদ্দিন আইবক)।

উত্তর। কুতুবউদ্দিন আইবকের।

৩) ইসলাম ধর্ম অনুসারে প্রধান শাসক - (এক জনই / তিন জনই)।

উত্তর। একজনই।

(৪) তাজউদ্দিন ইয়ালদু সজনির শাসক হিসাবে ---উপরেও অধিকার কায়েম করতে চাইলেন। (পাঞ্জাব/দিল্লি)।

উত্তর। দিল্লি। 

৫) কিন্তু, কুতুবউদ্দিনের - ইলতুতমিস যখন সুলতান হলেন তখনই গোলমাল জটিল হয়ে উঠলো।

(জামাই/ভাইপো)।

উত্তর। জামাই।

(৬) দিল্লির সুলতানি নিজের মতো করে ভারতবর্ষে বা হিন্দুস্থানে প্রায় ___ বছর শাসন জারি রাখতে পেরেছিলেন। ( একশো দশ। তিনশো কুড়ি)।

উত্তর। তিনশো কুড়ি।


আরও পড়ুন - সুলতান শাসন নিয়ে বাছাইকৃত ১০০ টি প্রশ্ন



মন্তব্যসমূহ