সপ্তম শ্রেণীর ভূগোল । পঞ্চম অধ্যায়
নদী | River
Class 7 Geography Chapter 5 River
পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন দিক দিয়ে প্রবাহিত ছোটো ছোটো গলাধারগুলো যখন পরস্পর মিলিত হয়ে ভূমির ঢাল অনুসারে উঁচু থেকে নীচু স্থানের দিকে বয়ে চলে, তখন নদী সৃষ্টি হয়।
মালভূমি বা পাহাড় পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে নদী, সাগর, পসাগর, হ্রদ, জলাশয় বা অন্য কোনও নদীতে গিয়ে মেশে সেই জায়গাকে নদীর মোহানা বলে।
পর্বত ওপর থেকে পাদদেশ পর্যন্ত যে বিরাট অংশের জন্য স্থূল নদীতে এসে পড়ে, সেই অঞ্চলটা হল ওই নদীর ধারণ অববাহিকা।
পাহাড়ের চূড়ার অংশটা বৃষ্টির জলকে যখন বিভিন্ন দিকে ভা। করে বা বিভাজন করে, তাকে জলবিভাজিকা বলে। জলবিভাজিকার বিভিন্ন দিক থেকে বয়ে যাওয়া জল, একাধিক টো ছোটো জলধারার মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়ে মিলিত হয়ে মূল নদী তৈরি করে। উৎস থেকে সৃষ্টি হয়ে যখন কোনও অন্য নদীতে গিয়ে মেশে তখন তাকে উপনদী বলে। আবার মূল নদী থেকে বেরিয়ে যে নদী শাখার মতো ছড়িয়ে পড়ে, তাকে শাখা নদী বলে।
উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত যে খাতের মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হয় তাকে নদী উপত্যকা বলে। নদী তার উপনদী ও শাখানদী সহ উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত যে অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেই বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগকে বলে নদী অববাহিকা। যে নদী কোনও দেশের মধ্যে উৎপন্ন হয়ে সেই দেশের মধ্যেই কোনও হ্রদ বা জলাশয়ে গিয়ে মেশে তাকে অন্তর্বাহিনী নদী বলে। একাধিক দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হলে তাকে আন্তর্জাতিক নদী বলে।
যে সব নদী বরফগলা জ্বলে পুষ্ট, সারাবছর প্রবাহিত হয় তাকে নিত্যবহ নদী বলে। যে নদীতে বর্ষাকাল ছাড়া জল থাকে না, তাদের অনিত্যবহ নদী বলে।
নদীর কাজ কয় প্রকার ও কি কি ?
নদীর কাজ : নদীর কাজ মূলত তিনরকমের। নদী ও তার জলস্রোতের থাকায় মাটি, বালি, ছোটো বড়ো নুড়ি এমনকি বড়ে বড়ো সবই চূর্ণ করে এগিয়ে চলে, এটাই নদীর ক্ষয় কাজ। এইসব নুড়ি, বালি, পলি সবই নদীর স্রোতের সঙ্গে উঁচু থেকে নীচু অঞ্চলের দিকে বয়ে চলে, এটাই নদীর বহন কাজ। আবার স্রোত কমে গেলে এইসব পদার্থগুলো নদীর পাশে বা নদীর মধ্যে জমা হতে থাকে। এটা নদীর সঞ্চত কাজ।
নদীর বিভিন্ন প্রবাহ :
উৎসের কাছাকাছি যখন নদী গতিশীল তখন নদীর উচ্চপ্রবাহ। এই প্রবাহে নদীর প্রধান কাজ ক্ষয়কাজ। উচ্চপ্রবাহে নদীর উপনদী সংখ্যা কম থাকে। ফলে নদী উপত্যকা খুব চওড়া হয় না। এই এবং গভীর নদীতাকে ইংরেজি 'V' অক্ষরের মতো দেখতে হয় একে গিরিখাত বলে। বৃষ্টিহীন শুষ্ক অঞ্চলে এতে ক্যানিয়ন বলে। এইভাবে নদীর গতিপথে শক্ত আর নরম পাশের অনুভূমিকভাবে থাকলে, নদী নরম পাথরকে বেশি ক্ষয় করে। ফলে শক্ত আর নরম পাথরের মধ্যে ধোপের সৃষ্টি হয়। আর নদী শক্ত পাথরের ওপর থেকে নীচে পড়ে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়।
মালভূমি বা সমভূমি অঞ্চলে নদীর মধ্য প্রবাহ। এই প্রবাহে নদীর প্রধান কাজ বহন বা সঞ্জয়। অনেক সময় প্রবাহ কম থাকায় নদীর স্রোত স্তব্ধ হয় এবং নদীর মাঝে ভূখণ্ড দেখা যায় একে নদী দ্বীপ বলে। অনেক সময় এই প্রবাহ একদিক ভাঙে, অন্য পাড় গড়ে। কোনও কোনও সময় নদীর বাঁকের একটি অংশ মূল নদী থেকে পৃথক হয়ে যায়, একে দেখতে অনেকটা ঘোড়ার ক্ষুরের মতো হয়, একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে।
উচ্চ এবং মধ্যপ্রবাহের পর অত্যও মুন্নু ভূমি উপরদিকে এঁকেবেঁকে নদী মোহনা পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। এটাই নিম্ন প্রবাহ। এই প্রবাহে নদীর মূল কাজ সঞ্চয়। এই প্রবাহে নদীর মধ্যে পলি, বালি, কাঁকর জমে নদী অগভীর হয়ে যায়। ফলে বর্ষার অতিরিক্ত জল বন্যার সৃষ্টি করে। এই বন্যার সময়ে পলি সঞ্চিত হায় উর্বর প্লাবনভূমি সৃষ্টি করে। নদী মোহানার কাছে নদীর বহন করে আনা পলি, কাকড় জমে চড়া সৃষ্টি হয়। স্রোত তখন ভাগ হয়ে চড়ার দুদিক দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। ফলে প্রায় ত্রিভুজের মতো বদ্বীপ সৃষ্ট হয়।
মানব সভ্যতায় নদীর প্রভাব :
নদীর প্রভাব: মানুষের প্রাচীনতম সভ্যতাগুনে গড়ে উঠেছিল কোনও না কোনও নদীর তীরে। (সিন্ধু নদের তীরে সিন্ধু সভ্যতা, নীল নদের তীরে মিশরীয় সভ্যতা, টাইগ্রিস, ইউফ্রেটিস নদীর ধারে সুমেরীয় সভ্যতা)। বর্তমানকালে আমাদের গঙ্গা, পদ্মা, ব্রয়পুত্রের যে সুবিশাল সমভূমি, চিহ্নের ইয়াং-সি-বিয়াং, হোয়াংহো নদীর উপত্যকা সবই পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল অঞ্চল। অতএব নদী শুধু জন্ম দেয় না, তাকে লালনও করে।
পাঠ্যাংশের প্রশ্নোত্তর
নদীগুলো কতটা লম্বা? এঁকে ফেলতে পারো!
উত্তর। দৈর্ঘ্যাগুলো এক হাজার দিয়ে ভাগ করে ফেলো। তারপর ভাগগুলোকে সেমি ধরে একটা স্কেলে সেমির দাগ অনুযায়ী লম্বা করে লাইন এঁকে ফেলো। প্রতিটি নদীর জন্য একটি রে লাইন টানতে হবে। যেমন ৬৩০০ কিলোমিটারকে ১০০০ দিয়ে ভাগ কদালে হয় ৬.৩ । একে সেন্টিমিটার ধরে নিয়ে খাতায় একটা ৬.৩ সেমি লম্বা লাইন এঁকে ফেলো। প্রতিটি নদীর জন্য টানা লাইনগুলোর পাশে নদীর নামগুলো লিখে ফেলো। দেখো তো কোন নদী কতটা লম্বা।
ঢালু জায়গায় জল ঢেলে দিয়ে দেখো ভূমির ঢাল কোন্দিকে?
জল উঁচু থেকে নীচের দিকে পড়লে যাবে, ঢালের ওপরের দিকে এবার পাশাপাশি (৬ ইঞ্চি ব্যবধানে) কিন্তু একটু ওপরে বা নীচে তিনটি বিন্দু 'ক', 'খ', 'গ' চিহ্নিত করো। এরপর তিনটি বিন্দুতে জল ঢেলে দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেই দেখো তিনটে জলধারা কীভাবে উঁচু থেকে নীচের দিকে যায়।
আরও একটা বিন্দু 'খ' নাও। 'খ'-এর সামনে এক ফুট দূরে একটা বড়ো ইট বা বড়ো পাথর রেখে দাও, এবার ‘খ’ বিন্দুতে জল ঢেলে দেখো জলধারাটি কীভাবে যায়।
উত্তর। ভেবে দেখো তো!
আগের দুটো পরীক্ষায় জলের প্রবাহ লক্ষ্য করে যা কিছু হতে পারলে তার সঙ্গে এই উপনদী ও শাখানদী ধারণার কি কোনও মিল পেলে?
উত্তর। প্রথম পরীক্ষায় বিভিন্ন নদী এসে একটি নদীতে মিশেছে তাই এরা উপনদী। দ্বিতীয় পরীক্ষায় জানা গেল যে, একটি নদী থেকে জলাধার একাধিক দিকে প্রবাহিত হয়ে শাখানদী সূ। হয়েছে। উপনদী ও শাখানদী সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা হল।
প্রশ্ন। পুজোর ছুটিতে গঙ্গোত্রী বেড়াতে গিয়ে পুতুল যখন জানতে পারল যে ডায়মন্ডহারবারে তার বাড়ির পাশ দিয়ে চলে যাওয়া শান্তশিষ্ট গঙ্গানদীটাই এখানে ভীষণ জোরে শত করে ছুটে চলেছে, তখন তার বিস্ময়ের আর সীমা রইল না।
আরও একটা ব্যাপার সে লক্ষ করল, গঙ্গোত্রী নদীটা খুব বেশি চওড়া। এর বেশি জলও নেই, তথাপি প্রবল তার গতি। কিন্তু তার বাড়ির কাছে এই নদীটাই কত চওড়া আর প্রচুর জলে ভরতি। বলতে পারো, একই নদী দু'জায়গায় দু'রকম কেন?
উত্তর। পার্বত্য অঞ্চলে নদীর শক্তি বেশি থাকে কারণ এখানে ভূমির ঢাল বেশি এবং ভূমির উঁচু-নীচু ভাব বেশি।আর উচ্চপ্রবাহে নদী উপনদী সংখ্যা কম থাকে বলে নদী উপত্যকা খুব চওড়া হয়না। কিন্তু প্রচণ্ড গতি থাকে। আর সমভূমিতে আসার পর নদী নিম্নপ্রবাহে চলে। এই গতিতে নদী স্রোতবেগ কমে যায়। এছাড়া সমতলে নদীর সঙ্গে অসংখ্য উপনদী সুপ্ত হয়ে বলে নদী উপত্যকা ক্রমশ প্রসারিত হয়। এই কারণে একই নদী দুটো জায়গায় দুরকম দেখা যায়।
প্রশ্ন। পুতুলের মতো তোমরাও নিশ্চয়ই তোমার বাড়ির আশেপাশের কোনও নদীকে লক্ষ করেছো, ভেবে দেখেছো! নদীর এত জল আসছে কোথা থেকে?
উত্তর। হ্যাঁ। লক্ষ করেছি গঙ্গা নদীকে। বরফগলা জল থেকে নদীর এত জল আসছে।
'আমাদের ছোটো ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।'
তোমার দেখা কোনও নদীর সঙ্গে যদি এই কবিতার মিল খুঁজে পাও, তাহলে সেই নদীটার নাম লেখো....
উত্তর। নদীটার নাম অজয়
পরীক্ষা করে বলো তো?
প্রশ্ন। জল কোথায় তাড়াতাড়ি গড়িয়ে যায়?
উত্তর। সমতল জায়গায় [ ] ঢালু জায়গায় [✔️]
প্রশ্ন। ঢালু জায়গায় জল কখন তাড়াতাড়ি গড়িয়ে যায়?
উত্তর। জলের পরিমাণ বাড়লে [✔️] জলের পরিমাণ কমলে [ ]
ভেবে নিয়ে লিখে ফেলো।
উত্তর। নদীর শক্তি → বৃদ্ধি পেলে → উচ্চপ্রবাহ
↓→→ হ্রাস পেলে → নিম্নপ্রবাহ
● উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর গতিপথ।
প্রশ্ন। নদীর এরকম বাঁককে কী বলে লেখো তো?
উত্তর। মিয়েল্ডার বলে।
● ঠিক ঠিক লেখো দেখি-
উত্তর।
উচ্চগতি মধ্যগতি নিম্নগতি
↓ ↓ ↓
ক্ষয়কাজ বেশি ক্ষয়কাজ কম ক্ষয়কাজ হয় না
↓ ↓ ↓
সঞ্চয়কাজ কম বহন কাজ বেশি সঞ্চয় বেশি হয়।
প্রশ্ন। তোমার বাড়ির কাছাকাছি কোনও নদীকে লক্ষ করে নদীর বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে ধারণা করো। নদীটার নাম।
উত্তর। নদীটার নাম গঙ্গা।
নদীর গতিবেগ (বেশি / কম)
নদীতে জল (বেশি / কম/ )
ভূমির ঢাল (বেশি / কম )
অতএব নদীটির কোন্ প্রবাহ? (উচ্চ / মধ্য / নিন্ম)।
নদী যেখানে মেশে - মোহনা
যে নদীতে সারাবছর জল থাকে - নিত্যবহ
মূল নদী থেকে যে নদী বেরিয়ে যায় - শাখানদী
যে ভূখণ্ড বৃষ্টির জলকে বিভিন্ন দিকে ভাগ করে দেয় - জলবিভাজিকা
শুষ্ক অঞ্চলের সুগভীর গিরিখাতকে যা বলে - ক্যানিয়ন
নদীর জল ওপর থেকে নীচে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।
নদীর দুধারে বন্যার সময় পলি সঞ্চিত হয়ে প্লাবনভূমি সৃষ্টি হয়।
উচ্চপ্রবাহে মধ্যপ্রবাহে নিম্নপ্রবাহে নদী যে প্রধান কাজগুলো করে - ক্ষয়কাজ, বহন, সঞ্চয়
1. নদীর উৎস কাকে বলে?
উঃ। নদী যেখানে সৃষ্টি হয়, সেই জায়গাকেই নদীর উৎস বলে।
2. নদীর জল প্রবাহের পরিমাণের একক কী?
উঃ। নদীর জল প্রবাহের পরিমাণের একক কিউসেক।
3. নদীর উপত্যকা কাকে বলে ?
উঃ। উৎস' থেকে ‘মোহানা' পর্যন্ত যে খাতের মধ্যে দিয়ে নদী প্রবাহিত হয় তাকে নদীর উপত্যকা বলে।
4. পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো বদ্বীপ কী?
উঃ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপ হল গঙ্গানদীর বদ্বীপ।
5. ‘দোয়াব’ কথার অর্থ কী?
উঃ । 'দো' মানে দুই ও ‘আব' মানে জল/নদী। দোয়াব অর্থাৎ দুই নদীর মধ্যবর্তী স্থান।
6. নদীর ক্ষমতা কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?
উঃ। নদী উপত্যকার ঢাল, শিলার প্রকৃতি, জলপ্রবাহের শক্তি, বাহিত বস্তুর আকার ও ওজনের ওপর নদীর ক্ষমতা নির্ভর করে।
7. কোথা থেকে গঙ্গার উৎপত্তি হয়েছে?
উঃ। গঙ্গোত্রী হিমবাহের 'গোমুখ থেকে ভারতের প্রধান নদী গঙ্গার উৎপত্তি হয়েছে।
8. গঙ্গা নদীর মোহানা কোথায়?
উঃ । পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে গঙ্গা নদীর মোহানা।
9. গঙ্গার প্রধান দুটি শাখানদী কী কী ?
উঃ। গঙ্গার প্রধান দুটি শাখানদী হল ভাগীরথী ও পদ্মা।
10. একাধিক দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদীকে কী বলে?
উঃ। একাধিক দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদীকে আন্তর্জাতিক নদী বলে।
11. আবদ্ধ শৈলশিরা কোন্ অংশে গঠিত হয়?
উঃ। আবদ্ধ শৈলশিরা নদীর পার্বত্য প্রবাহে গঠিত হয়।
12. পৃথিবীর বৃহত্তম নদী অববাহিকা কোনটি?
উঃ। আমাজন নদীর অববাহিকা পৃথিবীর বৃহত্তম অববাহিকা।
13. নদী কী?
উঃ। নদী হল স্বাভাবিক প্রবহমান জলধারা, যা অভিকর্ষের টানে ভূমির ঢাল অনুসারে উৎস থেকে মোহানার দিকে চলে।
14. গঙ্গা নদীর উচ্চপ্রবাহ কতদূর পর্যন্ত দেখা যায়?
উঃ। উত্তরাখণ্ডের গোমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গানদীর উচ্চ প্রবাহ দেখা যায়।
15. আদর্শ নদী কাকে বলে ?
উঃ। যে নদীতে তিনটি গতি অর্থাৎ উচ্চগতি, মধ্যগতি, নিম্নগতি সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়, তাকেই আদর্শ নদী বলে।
যেমন—গঙ্গানদী। মনে রাখতে হবে সব নদীতে ‘উচ্চ' 'মধ্য' ও 'নিম্ন' এই তিনটি প্রবাহ দেখা যায় না।
16. নদীর সৃষ্টি হয় কীভাবে?
উঃ। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন দিক থেকে প্রবাহিত ছোটো ছোটো জলাধারগুলো যখন পরস্পর মিলিত হয়ে অনুসারে উঁচু থেকে নীচু স্থানের দিকে বয়ে চলে তখনই নদীর সৃষ্টি হয়।
17. উপনদী কাকে বলে?
উঃ। মূল নদীতে যে সমস্ত ছোটো জলধারা এসে পড়ে তাদের উপনদী বলে। যমুনা, গোমতী, ঘর্ঘরা, কোশী, গণ্ডক প্রভৃতি নদীগুলি গঙ্গার উপনদী।
18. শাখানদী কাকে বলে ?
উঃ। মূল নদী থেকে যে সমস্ত নদী শাখার মতো বেরিয়ে গিয়ে অন্য উপনদী কোথাও মেশে তাদেরকে শাখানদী বলে। ভাগীরথী-হুগলি হল গঙ্গার প্রধান শাখানদী ।
19. নদী অববাহিকা কাকে বলে ?
উঃ। নদী তার উপনদী, শাখানদী সহ উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত যে অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই বিস্তীর্ণ ভূমিভাগকে নদী অববাহিকা বলে।
20. মোহানা কাকে বলে ?
উঃ। নদী যেখানে গিয়ে শেষ হয় অর্থাৎ কোনো সাগর, উপসাগর, হ্রদ, জলাশয় বা অন্য কোনো নদীতে গিয়ে মেশে, সেই জায়গাকেই নদীর মোহানা বলে।
21. ধারণ অববাহিকা কাকে বলে?
উঃ। পর্বতের বরফগলা জল বা বৃষ্টির জল অসংখ্য ছোটো জলধারার মাধ্যমে বয়ে গিয়ে বড়ো নদী তৈরি হয়। এই জলধারাসহ মূল নদীটি যে বিরাট অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলটিকে ওই নদীর ধারণ অববাহিকা বলা হয়।
22. জলবিভাজিকা কাকে বলে ?
উঃ। কোনো পাহাড়ের চূড়ার অংশটি বৃষ্টির জলকে বিভিন্ন দিকে ভাগ করে বা বিভাজন করে, তাই তাকে জলবিভাজিকা বলে। জলবিভাজিকার বিভিন্ন দিকে বয়ে যাওয়া জল একাধিক ছোটো ছোটো জলধারার মাধ্যমে বয়ে গিয়ে, মিলিত হয়ে মূল নদী তৈরি করে।
23. উচ্চগতিতে নদী উপত্যকা 'V' আকৃতির হয় কেন?
উঃ। উচ্চগতিতে নদীর স্রোতের সঙ্গে নানা ছোটো-বড়ো পাথর নদীর তলায় ধাক্কা দিয়ে ক্ষয় করে। এই ক্ষয়ের ফলে নদী উপত্যকা চওড়া না-হয়ে গভীর হয়। এই গভীর নদী উপত্যকা ইংরেজি 'V' আকৃতির দেখতে হয়।
24. সব নদী মোহনায় ব-দ্বীপ সৃষ্টি করতে পারেনা কেন ?
উঃ। নিম্নগতিতে নদীর সঞ্চয়কাজ বেশি হয়। নদীর দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত পলি, কাদা, নুড়ি, বালি ইত্যাদি বয়ে এসে মোহানায় সজ্জিত হয়ে ব-দ্বীপ গঠন করে। অনেক নদীতে নিম্নগতি দেখা যায় না বা নদী দ্বারা বাহিত শিলাখণ্ডের পরিমাণও খুব বেশি হয় না। নদীতে জলের স্রোত খুব বেশি থাকলেও নদীর মোহানায় ব-দ্বীপ গঠিত হয় না। এই কারণেই পৃথিবীর বৃহত্তম নদী আমাজনের কোনো ব-দ্বীপ নেই।
25. অন্তর্বাহিনী নদী ও আন্তর্জাতিক নদী কাকে বলে?
উঃ। যে নদী কোনো দেশের মধ্যে উৎপন্ন হয়ে সেই দেশের মধ্যেই কোনো হ্রদ বা জলাশয়ে গিয়ে মেশে তাকে অন্তর্বাহিনী নদী বলে। ভারতের লুনি, রাশিয়ার আমুদরিয়া অর্ন্তবাহিনী নদী। যেসব নদী একাধিক দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় তাদের আন্তর্জাতিক নদী বলে। যেমন— সিন্ধু, ব্রষ্মপুত্র, ইউরোপের রাইন, দানিয়ুব প্রভৃতি আন্তর্জাতিক নদী ।
26. গিরিখাত (Gorge) ও ক্যানিয়ন (Cannyon) কাকে বলে?
উঃ। পার্বত্য অঞ্চলে নদীর উপত্যকা খুব সরু ও গভীর হলে 'I' বা 'V' আকৃতির মতো দেখতে হলে তাকে গিরিখাত বলে। যেমন পরুর এল ক্যানন দ্য কলরম। বৃষ্টিহীন পার্বত্য অঞ্চলে ও শুষ্ক অঞ্চলে এরকম সুগভীর গিরিখাতকে ক্যানিয়ন বলা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।
27. খাঁড়ি কী?
উঃ। কিছু নদীর মোহানায় জোয়ারের সময় সমুদ্রের নোনা জল মোহানার ভেতর দিয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়। আবার ভাটার সময় সমুদ্রে জল নেমে আসে। এভাবে চওড়া মোহানা বা খাঁড়ির সৃষ্টি হয়। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলের প্রচুর নদীতে এরকম খাঁড়ি দেখা যায়।
28. জলপ্রপাত (জলপ্রপাত) কিভাবে গতিপথ হয়?
উঃ। নদীর গতিপথে কঠিন ও নরম শিলা আনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে নদী নরম পাথরকে বেশি ক্ষয় করে, তাই শক্ত ও নরম পাথরের মধ্যে ধাপের সৃষ্টি হয়। তখন নদী শক্ত পাথরের উপর থেকে নীচে পাথরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একে জলপ্রপাত বলে।
29. ব-দ্বীপ (Delta) কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উঃ। নদীর মোহনার কাছে নদীর বহন করে আনা পলি, বালি, কাঁকর জমা হয়ে চড়া সৃষ্টি হয়। নদীর স্রোত তখন ভাগ হয়ে চড়ার দুদিক দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এর ফলে প্রায় ত্রিভুজের মতো বা বাংলার মাত্রাহীন 'ব' অক্ষরের মতো যে বিস্তীর্ণ সমতল ভূভাগ বা দ্বীপ সৃষ্টি হয় তাকেই ব-দ্বীপ বলে। যেমন গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মিলিত ব-দ্বীপ সমভূমি।
30. অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ কাকে বলে?
উঃ। নদীতে বাঁকের পরিমাণ বাড়লে বা নদীতে জল বাড়লে কখনো-কখনো নদী বাঁকের একটা অংশ মূল নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই বিচ্ছিন্ন হওয়া অংশটি ঘোড়ার খুরের মতো দেখতে হয়। এরূপ হ্রদকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলা হয়।
31. মিয়েডার কাকে বলে?
উঃ। নদীর মধ্যপ্রবাহে বেগ কমে যাওয়ার ফলে নদী ধীর গতিতে চলতে থাকে। এই অবস্থায় সামান্য বাধা এলে নদী আঁকাবাঁকা পথ সৃষ্টি করে চলতে থাকে। একে মিয়েন্ডার বা নদী বাঁক বলে।
32. নিত্যবহ নদী কাদের বলে?
উঃ। যে সব নদী উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে সৃষ্টি হয় তার জলের উৎস বেশির ভাগই বরফ গলা জল। এই নদীগুলিতে সারা বছর জল থাকে বলে এদের নিত্যবহ নদী বলে। যেমনঃ গঙ্গানদী।
33. অনিত্যবহ নদী কাদের বলে?
উঃ। মালভূমি বা অন্য কোনো কম উঁচু জায়গায় সৃষ্টি হওয়া নদীগুলির জলের উৎস বৃষ্টির জল। এই কারণে বর্ষাকাল ছাড়া এই নদীগুলিতে সারা বছর জল থাকে না। তাই এই নদীগুলিকে অনিত্যবহ নদী বলে। যেমনঃ ময়ূরাক্ষী নদী।
34. কীভাবে নদী জলচক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে?
উঃ। বৃষ্টির জল নদীর মধ্য দিয়ে সাগরে গিয়ে পড়ে। সেই সাগরের জল বাষ্পীভূত হয়ে আবার বৃষ্টিরূপে নদীতে ফিরে আসে। এভাবেই নদী জলচক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।
35. পৃথিবীর সব জায়গায় কি নদীর কাজ ও তিনটি প্রবাহ দেখা যায় ?
উঃ। পৃথিবীর মোট স্থলভাগের ৬০ শতাংশ স্থানে কম বেশি নদীর কাজ দেখা যায়। সব নদীতেই উচ্চ, মধ্য ও নিম্নপ্রবাহ এই তিনটি প্রবাহ দেখা যায় না।
36. নদী কখন প্লাবনভূমি সৃষ্টি করে?
উঃ। নিম্নপ্রবাহে নদীর মধ্যে পলি, বালি, কাকর জমে নদী অগভীর হয়ে যায়, ফলে বর্ষার অতিরিক্ত জল দুকুল ছাপিয়ে। বন্যার সৃষ্টি হয় এবং বন্যার সময় নদী তার দুধারে বিস্তীর্ণ জমিতে পলি সঞ্চিত করে এবং উর্বর প্লাবনভূমি সৃষ্টি করে। চীনের হোয়াংহো নদীর নিম্নগতিতে এরূপ প্লাবনভূমি দেখা যায়।
37. নদীর কাজগুলি বর্ণনা করো।
উঃ। নদী মূলত বয়ে যাওয়া জলধারা। সে তার চলার পথে ক্ষয়কাজ, বহনকাজ ও সঞ্চয়কাজ—এই তিন রকমের কাজ করে। নদীর এই তিন প্রকার কাজ নির্ভর করে নদীর শক্তির ওপর। ক্ষয়কাজ—নদী তার জলস্রোতের ধাক্কায় মাটি, বালি, ছোটো বড়ো নুড়ি, এমনকি বড়ো পাথর সবই চূর্ণ করে ভাসিয়ে নিয়ে চলে। এটাই নদীর ক্ষয়কাজ বহনকাজ চূর্ণ করা এইসব নুড়ি, কাঁকর, বালি, পলি সবই নদীর স্রোতের সঙ্গে উঁচু থেকে নীচু অঞ্চলের দিকে বয়ে চলে। এটাই নদীর বহনকাজ।
সঞ্চয়কাজ—নদীর স্রোত কমে গেলে এইসব বহন করা পদার্থগুলি নদীর পাশে বা নদীর মধ্যে জমা হতে থাকে। এটাই নদীর সয়কাজ।
38. নদীর উচ্চপ্রবাহ কাকে বলে? এই প্রবাহে নদী কী কী কাজ করে?
উঃ। কোনো নদী যখন তার উৎস থেকে পার্বত্য অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্রবেগে প্রবাহিত হয় তখন নদীর ওই গতিকে উচ্চপ্রবাহ বলে। উৎস থেকে সমতলভূমিতে নামার আগে পর্যন্ত নদীর উচ্চপ্রবাহ। ভারতের প্রধান নদী গঙ্গার উচ্চপ্রবাহ গঙ্গোত্রীর গোমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল ও বন্ধুরভাব বেশি হওয়ার জন্য নদীর শক্তি বেশি থাকে।
ফলে এই প্রবাহে নদীর প্রধান কাজ ক্ষয়। নদীর স্রোতের সঙ্গে ছোটো বড়ো পাথরগুলি নদীর তলায় ধাক্কা দিয়ে ক্ষয় করে। ফলে নদীর উপত্যকা গভীর হয়। এই সরু ও গভীর নদী উপত্যকা দেখতে হয় ইংরেজি I ও V অক্ষরের মতো। একে গিরিখাত বলে। নদীর গতিপথে নদী নরম পাথরকে বেশি ক্ষয় করে। ফলে শক্ত ও নরম পাথরের মধ্যে ধাপের সৃষ্টি হয়, আর নদী উপর থেকে নীচে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলপ্রপাত সৃষ্টি করে।
39. নদীর মধ্যপ্রবাহ কাকে বলে? এই প্রবাহে নদীর কাজগুলি লেখো।
উঃ। পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে নদী যখন সমভূমির ওপর দিয়ে বয়ে যায় তখন নদীর গতিকে মধ্যপ্রবাহ বলা হয়। মালভূমি বা সমভূমি অঞ্চলে নদীর মধ্যপ্রবাহ দেখা যায়। হরিদ্বার থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুরশিদাবাদের মিঠিপুর পর্যন্ত গঙ্গানদীর মধ্যপ্রবাহ। মধ্যপ্রবাহে ভূমির ঢাল কম থাকায় নদীর গতি এবং শক্তি দুই-ই কমে যায়। এসময় নদী প্রধানত বহন ও সময়কাজ করে।
এসময় নদীর নীচের দিকে ক্ষয় না হওয়ার ফলে নদীর গভীরতা কমে এবং প্রচুর উপনদীর মাধ্যমে জলের পরিমাণ বাড়ে। নদী খুবই আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হয়ে মিয়েন্ডার সৃষ্টি করে। বয়ে আনা পলি, বালি, নুড়ি, কাঁকর নদীর দুধারে বা মাঝে সজ্জিত হয়। নদীতে চড়া পড়ে কখনও নদী-দ্বীপ তৈরি হয়। নদীতে কাঁকরের পরিমাণ বা জল বাড়লে বাঁকের একটা অংশ মূল নদী থেকে আলাদা হয়ে যায়। এই আলাদা অংশটি দেখতে ঘোড়ার খুরের মতো হয় একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে।
40. নদীর নিম্নপ্রবাহ কাকে বলে? এই প্রবাহে নদীর কাজগুলি লেখো।
উঃ। নদী যখন সাগরের কাছাকাছি সমভূমিতে প্রবাহিত হয়ে মোহনা অঞ্চলে এসে পড়ে তখন তার যে প্রবাহ দেখা যায় তাকে নদীর নিম্নগতি বা নিম্নপ্রবাহ বলে। উচ্চ ও মধ্যপ্রবাহের পর অত্যন্ত মৃদু ভূমিঢালের ওপর দিয়ে নদী মোহানা পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। এটিই নদীর নিম্ন প্রবাহ। মুরশিদাবাদের মিঠিপুরের পর থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহানা পর্যন্ত গঙ্গানদীর নিম্নপ্রবাহ।
এই সময় নদীর গতি এবং শক্তি একেবারেই কমে যায়। তখন সামান্য বহন কাজ হলেও নদীর মূল কাজ হয় সঞ্চয়। এই প্রবাহে নদী শাখানদী সৃষ্টি করে। নদীর মধ্যে পলি, বালি, কাঁকর জমে অগভীর নদী বর্ষায় দুকূল ছাপিয়ে যায়। নদীর দু'ধারের বিস্তীর্ণ জমিতে পলি সঞ্চয় করে নদী প্লাবনভূমি সৃষ্টি করে। মোহানার কাছে নদীর চড়া সৃষ্টি হয়। নদীর স্রোত তখন ভাগ হয়ে চড়ার দু'দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ত্রিভুজের মতো ব-দ্বীপ সৃষ্টি করে।
41. ‘নদীর স্বাভাবিক ছন্দ মানুষই নষ্ট করেছে—আলোচনা করো।
উঃ। মানুষের জীবনের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক নিবিড় হলেও মানুষের কিছু কিছু কাজ নদীর স্বাভাবিক ছন্দকে নষ্ট করে চলেছে। মানুষের কৃষি ব্যবস্থার প্রসার, শিল্পায়ন, নগরায়ন প্রভৃতি নানাভাবে নদীকে প্রভাবিত করেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য নদীর ওপর কৃত্রিম বাঁধ তৈরি করে মানুষ সাময়িক সুফল পেলেও শেষপর্যন্ত তা আরও ভয়াবহ বন্যার কারণ হয়ে উঠেছে। একদিকে কৃষিজমি থেকে ধুয়ে আসা পলিতে নদী ক্রমশ ভরাট হচ্ছে অন্যদিকে সেচের জলের জোগান দিয়ে নদী ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। শহর ও শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য জল নদীতে মিশে গিয়ে নদীর জল ক্রমশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে।
42. আমাদের জীবনে নদীর প্রভাব কতখানি তা বুঝিয়ে লেখো ?
উঃ। নদীমাতৃক এই দেশের নদীগুলি আসলে আমাদের জীবনকথা। এই নদীগুলি শুধু ভূগোল বা ইতিহাস নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে নানাভাবে এরা জড়িয়ে আছে। মানুষের প্রাচীনতম সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা প্রভৃতি গড়ে উঠেছিল কোনো-না-কোনো নদীর ধারে। বর্তমানে আমাদের দেশের গঙ্গা, পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্রের যে বিশাল সমভূমি, চিনের হোয়াংহো ও ইয়াং-সিকিয়াং নদীর উপত্যকা সবই পৃথিবীর জনবহুল অঞ্চল। তাই বলা যায় নদী শুধু সভ্যতার জন্ম দেয় না, তাকে পালনও করে।
মন্তব্যসমূহ