পঞ্চম অধ্যায়
মুঘল সাম্রাজ্য
মুঘল কারা
১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে এক বিশাল বাহিনী নিয়ে বাবর দিল্লির অভিমূখে অগ্রসর হন। পাণিপথের প্রান্তরে ইব্রাহিম লোদীর সঙ্গে যুদ্ধে বাবর জয়লাভ করেন। এভাবে পাণিপথের যুদ্ধে জয়লাভ করে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়। মুঘল সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ সম্রাট বলতে আকবরকে বোঝায়। ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা ইউরোপ থেকে ভারতে আসার অলপথ আবিষ্কার করেন আমরা তা জেনেছি। তারপর ওই পথ ধরে পর্তুগাল থেকে ক্রমাগত ব্যবসায়ী, এমনকি জলদস্যুরাও ভারতে আসতে থাকে। ভাস্কো-শ-গামাও দ্বিতীয়বার ভারতে আসেন ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে। ওই সময় কোচিন বন্দরে তিনি একটি বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করেন। এটি ভারতে দ্বিতীয় পর্তুগিজ বাণিজ্য কুঠি।
তবে ভারতে পর্তুগিজ শক্তির তথ্য উপনিবেশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আলফাঙ্গে ডি. আলা মামে এক দূর্ধর্ষ নাবিক। তিনি গোয়া দখল করে (১৫১০) সেখানে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। এই গোয়া ই পর্তুগালের প্রাচ্য উপনিবেশের মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এইভাবে একশো বছরের বেশি সময় ধরে পর্তুগিজরা, ব্যাবসা করে যায়। অবশেষে সতেরো শতকের শুরু থেকে পর্তুগিজদের পথ ধরেই একে একে ডাচ অর্থাৎ ওলন্দাজ , ইংরেজ, ডেন অর্থাৎ দিনেমার, সুইডিস, ফ্রোমিস অস্ট্রিয়ান ও সবশেষে ফরাসি বণিকেরা এদেশে বাণিজ্য করতে আসে।
ইংরেজাদের প্রধান বাণিজ্য কুঠি ছিল কলকাতা, পাটনা, কাশিমবাজার, সুরাট, মাদ্রাজ, বোম্বাই ইত্যাদি। আর ফরাসিদের প্রধান বাণিজ্যকুঠি ছিল পন্ডিচেরী, কারিকল, মুসলিম, চন্দননগর, সুরাট, মাহে ইত্যাদি স্থানে। তবে এদের মধ্যে ভারতে ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলেছিল দীর্ঘদিন।
শেষ পর্যন্ত ইংরেজরা এতে জয়ী হয়। অবশ্য গোয়া, দমন, দিউ-এ পর্তুগিজরা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। ষোড়শ শতক থেকে উপবিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মুঘলরা ভারত শাসন করেছিল। অবশ্য অষ্টাদশ শতক থেকে তাদের ক্ষমতা অনেক কমে গিয়েছিল। ভারতবর্ষের প্রথম মুঘল বাদশাহ ছিলেন মির্জা জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর । ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৈমুরলঙ উত্তর ভারত আক্রমণ করেন। ভারতবর্ষে আসার আগে মুঘলরা মধ্য এশিয়ার কিছু অংশে শাসন করত। এর আগে চতুর্দশ শতকে মোঘল শাসকের সাম্রাজ্যের পতনের সুযোগে তৈমুর তাঁর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি মধ্য এশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল জন্ম করেন। মুঘলদের মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।
মুঘল শাসন ব্যবস্থা
মুঘল সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট কে ?
মুঘল সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ সম্রাট কে ?
মুঘল শাসন ব্যবস্থায় বাদশাহ স্বয়ং ছিলেন সর্বপ্রধান। বাবর মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ঠিক, কিন্তু তিনি সুদৃঢ় ও সুদূরপ্রসারী শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারেননি। সে কৃতিত্ব শুধু আকবরের। তিনি বিশাল মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপন এবং সুদৃঢ় শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। মুসলমান শাসনব্যবস্থার সঙ্গে বর্তমান শাসনব্যবস্থার কিছু সাদৃশ্য আছে। এখন যেমন কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে বিভিন্ন প্রদেশ আছে। মুঘল সাম্রাজ্যও তেমনি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত ছিল। এখন যেমন প্রত্যেক প্রদেশে একজন রাজ্যপাল আছেন, মুঘল সাম্রাজ্যেও তেমনি প্রত্যেক সুবায় একজন সুবাকার নিযুক্ত হতেন। শাসনকার্যের জন্যই সুরকারই সম্রাটের কাছে দায়ী থাকতেন। এখন যেমন প্রত্যেকটি প্রদেশে কতগুলি জেলায় বিভক্ত তখনও প্রত্যেক সুরা কয়েকটি সরকারে বিভক্ত ছিল। সরকারের শাসনকর্তাকে বলা হত ফৌজদার কৌতোয়াল উপাধিকারী কর্মচারীরা বড়ো বড়ো শহরে শাস্তি করত। এখনকার মতো জমি জরিপ করে খাজনা ধরা হত। আকবরের আমলে টোডরমল সমস্ত জমি জরিপ করে রাজস্ব নির্ধারণ করত। আবার অনেক বিষয়ে মুঘল শাসনব্যবস্থার সাথে বর্তমান শাসনব্যবস্থার অনেক পার্থক্য রয়েছে। এখনকার শাসনব্যবস্থার স্থায়ী কোনো স্বেচ্ছাচারের স্থান নেই। আর তখন মুঘল আমলে মন্ত্রীসভা থাকলেও সম্রাটরাই আসন পরিচালনা করত।
তৈমুর লঙ ও বাবর :
ভাস্কো-দা-গামা যখন ভারতে আসেন তখন দিল্লির সিংহাসনে লোদি বংশীয় সুলতান রাজত্ব করতেন (১৪৮৯-১০১৭)। দিল্লি সুলতানির তখন পতনন্মোখ অবস্থা। ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য বলে তখন আর কিছুই ছিল না। বিভিন্ন প্রান্তে কয়েকটি আঞ্চলিক শক্তির উত্থান কেন্দ্রীয় শাসনের দুর্বলতাকে সুস্পষ্ট করে তুলেছিল। পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশে হুসেন শাহী বংশের নেতৃত্বে স্বাধীন সুলতানি শাসন, মধ্য ভারতে রাজপুত জাতির পুনরুদান, দক্ষিণ ভারতের বিজয়নগরেও ভেঙে পড়া বাহমানী রাজ্যের বুকে পাঁচটি স্বাধীন রাজ্যখণ্ডের অভ্যস্থান সমকালীন ভারতের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার চিত্র তুলে ধরে। এদিকে তুঘলক শাসকের শেষ দিক থেকেই সুলতানি সমাজ সংকুচিত হয়ে দিল্লি ও তার আশেপাশে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। সৈয়দ ও লোদী শাসনকালে কিছুটা অঞ্চল পুনরুদ্ধার হলেও সাম্রাজ্যের বিশালতার গৌরব আর ফিরে আসেনি। এর সঙ্গে লোদী সুলতান ইব্রাহিম লোদীর ঔদ্ধত্য ও অপরিণামদর্শী শাসন এবং আফগান আমীরদের ক্ষমতালিপ্সা সুলতানি সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য করে তুলেছিল। সমকালীন ভারতীয় সমাজে হিন্দু ও মুসলমান, দুটি সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল। সুলতান ইব্রাহিম লোদীর অত্যাচারে আফগান আমীর দৌলত খাঁ লোদী ও সুলতানের আলমুখা লোদী সুলতানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। দৌলত খাঁও ছিলেন পাঞ্জাবের শাসনকর্তা।ইব্রাহিমকে উচ্ছেদ করার জন্য তিনি গোপনে কাবুলের আমীর তৈমুর বংশীয় বাবরকে আমন্ত্রণ জানান। অন্যদিকে মেবারের রানা সংগ্রাম সিংহ বাবরের ভারত আক্রমণের বিরোধিতা করেননি। অবশ্য এই তিনজনের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন ভিন্ন। দৌলত খাঁ-এর উদ্দেশ্য ছিল ইব্রাহিমের অত্যাচার থেকে রক্ষা ও স্বাধীন ভারতে রাজ্য শাসন, আহমদের উদ্দেশ্য ছিল দিল্লির সিংহাসন অধিকার, আর সংগ্রাম সিংহের উদ্দেশ্য ছিল মুসলমান অন্তদ্বন্দ্বের সুযোগে ভারতে হিন্দু সাম্রাজ্য স্থাপন। কিন্তু কারোরই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে (২১ এপ্রিল) পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোনীকে পরাজিত ও নিহত করে বাবর নিজেই দিল্লির সিংহাসনে বসেন। এই যুদ্ধে বাবর কার্মানের ব্যবহার করেন। যা ভারতীয়দের কাছে তখনও ছিল অজ্ঞাত। এইভাবে সুলতানি সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে দিল্লির সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত হল মুঘল বংশ। জাতিতে চাঘতাই তুর্কী বাবরের প্রকৃত নাম জাহিরউদ্দিন মুহম্মদ। তিনি ছিলেন কাবুলের তৈমুর বংশীয় অধিপতি। তবে তার পৈতৃক রাজ্য ছিল মধ্য এশিয়ার ফারগানা আর মায়ের দিক থেকে তিনি ছিলেন মোঙ্গল বীর চেঙ্গিজ হাঁর বংশধর। বাবর এই মোঙ্গল রক্তেরই প্রাধান্য দিয়ে নিজেকে মোঙ্গল বলে পরিচয় দিতেন। অবশেষে ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে মুরীয় বংশোধরের মাত্র বারো বছর বয়সে ফরগনা প্রদেশের শাসনভার পান। পরবর্তীকালে মধ্য এশিয়ার রাজনীতিতে উত্তাবেগ এবং সফাবিদের মতো সাফল্য না পেয়ে বাবর ভারতের দিকে অগ্রসর হন।
বাদশাহ কে ?
১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে মুঘল বাদশাহ ছিলেন বাবর। ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে আকবরের মৃত্যু হলে তার বড়ো ছেলে নূরউদ্দীন মুহম্মদ জাহাঙ্গীর বাদশাহ গাজি উপাধি নিয়ে দিল্লির সিংহাসনে বসেন। মেবারকে মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত ও বাংলার বারো ভূঁইয়াদের প্রতিরোধ চূর্ণ করে মুঘল আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত করা, সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে লহাঙ্গীরের দুই অনন্য কৃতিত্ব। এছাড়া উত্তর পূর্ব পঞ্জাবে দুর্ভেদ্য কাংড়া দুর্গ করে রাজত্বকালের আর এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। দাক্ষিণাত্যে হাবসী নেতা মালিক অম্বরকে পরাজিত করে আহম্মদনগরের আর এক বিশাল অংশ তিনি মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। অবশ্য জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে পারস্য সম্রাট (শাহ) আব্বাস আবার কান্দাহার দখল করে নেন (১৬২৬খ্রি.)। এই সময় জাহাঙ্গীরের সেজ ছেলে খুররম (শাহজাহান) বিবাহ করায় তাঁর পক্ষে কান্দাহার পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর জীবিত খুররম ও ছোটো ছেলে শাহরিয়ারের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বে জয়লাভ করে খুররম শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ শাহজাহান বাদশাহ গাজি উপাধি নিয়ে ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লির সিংহাসনে বসেন।
মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপন ও বিস্তার যুদ্ধ ও মৈত্রী :
সুলতান ইব্রাহিম লোদীর অত্যাচারে আফগান আমীর দৌলত খাঁ লোদী ও সুলতানের কাকা আলম খাঁ লোদী সুলতানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। দৌলুত খাঁ ছিলেন পাঞ্জাবের শাসনকর্তা। ইব্রাহিমকে উচ্ছেদ করার জন্য তিনি গোপনে কাবুলের আমীর তৈমুর বংশীয় বাবরকে আমন্ত্রণ জানান। অন্যদিকে মেবারের রাণা সংগ্রাম সিংহ বাবরের ভারত আক্রমণের বিরোধিতা করেন। অবশ্য এই তিনজনের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন ভিন্ন। দৌলত খাঁর উদ্দেশ্য ছিল দিল্লির সিংহাসনে আধিপত্য কে রক্ষা ও স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন, আলমহীর উদ্দেশ্য ছিল দিল্লির সিংহাসনে মুসলমান অন্তর্বান্দর সুযোগে ভারতে হিন্দু সাম্রাজ্য স্থাপন কিন্তু কারো উদ্দেশ্য সফল হয়নি।
পাণিপথের প্রথম যুদ্ধ
১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে (২১ এপ্রিল) পাণিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোনীকে পরাজিত ও নিহত করে বাবর নিজেই দিল্লির সিংহাসনে বসেন। এই যুদ্ধে বাবর কামান ব্যবহার করেন। যা ভারতীয়দের কাছে তখনও ছিল অজ্ঞাত। এইভাবে সুলতানি সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে দিল্লির সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত হল মুঘলবংশ। জাতিতে চাঘতাই তুর্কী বাবরের প্রকৃত নাম জাহিরউদ্দীন মুহম্মদ। তিনি ছিলেন কাবুলের তৈমুর বংশের অধিপতি তবে তার পৈতৃক রাজ্য ছিল মধ্য এশিয়ার ফারগানা। মায়ের দিক থেকে তিনি ছিলেন মঙ্গলবীর চেশিখীর বংশষর। বাবর এই মেঙ্গাল রক্তেরই প্রাধান্য দিয়ে নিজেকে মোঙ্গল বা মূঘলবংশ নামে পরিচিতি দিতেন। পানিপথের প্রথমযুদ্ধে দিল্লি ও আগা দখলে এলেও ভারতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পথে বাবরের সামনে তখনও দাঁড়িয়ে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী একটি মেবারের রানা সংগ্রাম সিংহের নেতৃত্বে রাজপুত শক্তি, অপরটি বাংলা বিহারের আফগান শক্তি। রানা সংগ্রাম ছিলেন মস্ত ধীর।
খানোয়ার যুদ্ধ
১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ আসার ৫৬ মাইল পশ্চিমে খানুয়ার প্রান্তরে তাঁর সঙ্গে বাবরের তুমুল যুদ্ধ হয়। পানিপথের মতো এখানেও বাবর তাঁর গোলন্দাজ বাহিনীর সাহায্যে সহজেই শত্রুকে পরাজিত করেন। ইতিহাসে যুদ্ধটি মানুষার যুদ্ধ নামে খ্যাত। এই যুদ্ধে জয়লাভের ফলেই ভারতে মুঘল শাসন এক ঐতিহাসিক মতে পরিণত হয়।
ঘঘরা বা গোগরার যুদ্ধ
এরপর অনতিদূরে ঘঘরা বা গোগরার যুদ্ধে (১৫২৯) আফগানদের হারিয়ে বাবর মধ্য এশিয়ার অংশ থেকে পূর্ব বাংলাদেশের প্রান্ত পর্যন্ত এবং উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণ গোয়ালিয়র পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। তবে আর মাত্র একবধূর বাবর বেঁচে ছিলেন। তাই এদেশে নবপ্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্য সুষ্ঠ শাসন ব্যবস্থা গাড় তুলে তাকে সুসংহত ও সুগঠিত করে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।
পানিপথের প্রথম যুদ্ধে দিল্লি ও আগ্রা দখলে এলেও ভারতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পথে বাবরের সামনে তখনও দাঁড়িয়ে দুটি প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী একটি মেবারের রানা সংগ্রাম সিংহের নেতৃত্বে রাজপুত শক্তি,অপরটি বাংলা বিহারের আফগান শক্তি। রানা সংগ্রাম ছিলেন মস্ত ধীর
। ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ আগ্রার ৫৬ মাইল পশ্চিমে খানুষ্কা প্রস্তরে তাঁর সঙ্গে বাবরের তুমুল যুদ্ধ হয়। সেখানে প্রচুর বোমা ও গুলিবর্ষণ হয়। কামানের সাহায্যে সৈন্যরা গুলি চালায়। সৈন্যদের গুলির আক্রমণের ফলে আক্রমণকারীরা দিশহারা হয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পাণিপথের মতো এখানেও বাবর তার গোলন্দাজ বাহিনীর সাহায্যে সহজেই শত্রুকে পরাজিত করেন। ইতিহাসে যুদ্ধটি খানুয়ার যুদ্ধ নামে খ্যাত। এই যুদ্ধে জয়লাভের ফলেই ভারতে মুঘল শাসন এক ঐতিহাসিক সত্যে পরিণত হয়। এরপর বারে রণকৌশল ব্যবহার করে অনতিদূরে ঘর্ঘরা বা গোগরার যুদ্ধে (১৫২৯) আফগানদের হারিয়ে বাবর মধ্য এশিয়ার অন্ধু নদী থেকে পূর্ব বাংলাদেশের প্রান্ত পর্যন্ত এবং উত্তর হিমালয় থেকে দক্ষিণে গোয়ালিয়র পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার করেন।
বাবরের আমলে দুটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ –
খানুয়ার যুদ্ধে (১৫২৭) :
খানুয়ার যুদ্ধ ঘটেছিল ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে। এটি বাবরের মতে ছিল ধর্মযুদ্ধ। তিনি তাঁর সকল সৈন্যদের ধর্মযুদ্ধের লড়াই-এর কথা শুনিয়েছিলেন। তাঁরা হলেন ধর্মযোদ্ধা বা গাজি। তিনি একথা বলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। মেওয়াড়ের রানা সংগ্রাম সিংহই এই যুদ্ধে রাজপুতদের নতৃত্ব দেন। মেওয়াড়ের রানা সংগ্রাম সিংহ ও রাজপুতরা সকলে বারেকে বিলুপ্ত করার জন্য কয়েকজন মুসলমান শাসকের সঙ্গে যোগ দেয়। ফলে যুমাত্রাও বেড়ে যায়। সবশেষে এটি আর ধর্মীয় যুদ্ধ থাকে না।
ঘর্ঘরা যুদ্ধ : (১৫২৯খ্রি.)
পাটনার অনতিদূরে ঘর্ঘরা বা গোগরার যুদ্ধে (১৫২৯) আফগানদের হারিয়ে বাবর মধ্য এশিয়ার অসী নদী থেকে পূর্ব বাংলাদেশের প্রান্ত পর্যন্ত এবং উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে গোয়ালিয়র পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। তবে তার মাত্র এক বছর বাবর বেঁচে ছিলেন। তাই এদেশে নব প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্য সুন্ঠ শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলে তাকে সুসংহত ও সুগঠিত করে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।
মুঘল উত্তরাধিকারী নীতি : বাবরের সঙ্গে অভিজাত শ্রেণির সাময়িক সম্পর্ক ছিল। তাদের ভূমিকা মোঘল সাম্রাজ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বাবর তাঁর অবর্তমানে তাঁর পুত্র হুমায়ূনের হাতে সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেওয়ার কথা ভাবেন। তিনি শাসক হিসেবে হুমায়ুনকে যোগ্য মানতেন। তাই বাবরের মৃত্যুর পর (১৫৩০) তাঁর বড়ো ছেলে নাসিরুদ্দিন মহম্মদ হুমায়ূন দিল্লির সিংহাসনে বসেন। হুমায়ুনও কিন্তু রাজ্যে শাসন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। তা ছাড়া বাবরের মতো বড়ো যোদ্ধাও তিনি ছিলেন না। সেই আফগান ও রাজপুতরা আবার পূর্বল হয়ে ওঠে। শের খাঁ নামে বিহারের এক আফগানি সর্দার আফগানদের সঙ্গবদ্ধ করে বক্সারের কাছে মো (১৫৩৯) ও কনৌজের কাছে বিলগ্রামে (১৫৯০) পরপর দুটি যুদ্ধে হুমায়ুনকে পরাস্ত করেন। ফলে মুগলরাজা একজেটি হয়েও তারা কারী হতে পারেননি।
মুখ উত্তরাধিকার নীতি কথার মানে -
সামরিক অভিজাত:
যারা বংশগতভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যায় অর্থাৎ কোনো রাজ্যের রাজা বা শাসকের মৃত্যু হলে তাঁর পুত্রের হাতে শাসনকার্যের ভার দেওয়া হয়, আবার তাঁর শাসনকার্য শেষ হলে তাঁর পুত্রের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। এইভাবে পরস্পর ক্রমাগত বংশপরম্পরায় পরিচালনাকে সামরিক অভিজাত বলে। এবং তাদের বিভিন্ন কাজ পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্কও যোগাযোগ থাকত।
মুঘলদের রাজপুত্র নীতি ও দাক্ষিণাতা নীতির চরিত্রঃ আকবর থেকে ঔরঙ্গজেব
মুঘল ও রাজপুতদের মধ্যে সম্পর্ক :
১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে খানুয়ার যুদ্ধে মেবারের রাণা সংগ্রাম সিংহ বাবরের হাতে পরাস্ত হলেও রাজপুত শক্তির সম্পূর্ণ বিকাশ ঘটেনি। শেরশাহ কৌশলে রাজপুত শক্তিকে অবদমিত করে রাখলেও আকবরের আমলের রাজপুতশক্তির পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু সমকালীন উদার ধর্মীয় নীতির প্রভাবে আকবর রাজপুতদের প্রতি সমদর্শী নীতি গ্রহণ করেন এবং রাজপুত জাতিকে মুঘল সাম্রাজ্যে এক শক্তিশালী স্তম্ভে পরিণত করেন। আকবর উপলব্ধি করেন যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু প্রভাবিত ভারতবর্ষে হিন্দুদের সমর্থন ব্যতিরেকে শাসন চালানো অসম্ভব। তাই তিনি সর্বপ্রথম মুঘলরাজবংশের সঙ্গে মিত্রতাসূত্রে আবদ্ধ করে রাজপুত বিরোধিতার অবসান ঘটাতে সমর্থ হন। তিনি আরও উপলব্ধি করেন যে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি আরও সুদৃঢ় করতে রাজপুতদের সহযোগিতা ও সমর্থন প্রয়োজন। সাম্রাজ্য বিস্তারে আকবর রাজপুতদের সামরিক প্রভাবকে কাজে লাগান এবং সাম্রাজ্যকে নিরাপত্তার কারণে তাদের সহযোগিতা ব্যবহার করেন। তা ছাড়া মেবারের অন্তর্গত চিতোরের দুর্ভেদ্য দূর্গটি দখল করাও তার উদ্দেশ্য ছিল।
মুঘল আফগান দ্বন্দ্ব:
মুঘলদের দুটি প্রধান বিরোধী শক্তি ছিল রাজপুত এবং আফগান। এদের মধ্যে নানারকম বিরোধের সৃষ্টি হয়েছিল। তাদের মধ্যে বিহারের আফগানদের নেতৃত্ব দেন হুমায়ূন-এর গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষন্দ্বী শের খান। বিরোধিতা ঐক্যবদ্ধভাবে কখনো মুঘলদের বিরোধিতা ছিল না। শের খান হুমায়ুনের পর দুবার পরাজিত করেছিলেন। শের খান প্রথমবার হুমায়ুনকে পরাজিত করেছিলেন বিহারের কাছে চৌসা যুদ্ধে ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে। দ্বিতীয়বার শের খান হুমায়ূনকে পরাজিত করেন কনৌজের কাছে বিলগ্রামের যুদ্ধে ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে। শের খানের কাছে হুমায়ুন পরাজিত হবার পর প্রায় সময়ই দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতেন। যে সময় তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন সেই সময় তাকে আশ্রয় দেন পারস্যের শাহতাহমম্প। ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দে আকবরের জন্ম হয়। এই সময় হুমায়ুন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। শেরখান সেই সময় শাহ উপাধি গ্রহণ করেন।তখন তিনি ছিলেন দিল্লির আগ্রায়। শেরশাহের পুত্র তাঁর মারা যাওয়ার পর ক্ষমতায় আসেন। ইসলাম শাহের যখন মৃত্যু হয় তখন নানারকম রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। সেই সময় হুমায়ূন দেশে ফিরে এসেছিলেন। হুমায়ূন তখন দিল্লির পুরোনো কেঁচার পাঠাগারে সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান। সেই কারণে বেশিদিন শাসন করতে পারেন নি।
শেরশাহের সংস্কার (১৫৪০-৪৫):
সম্রাট আকবরের শাসন ব্যবস্থার ও আলাউদ্দিন খলজির শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে শেরশহের প্রশাসনিক ব্যবস্থা, রাজস্ব ব্যবস্থার অনেক মিল দেখা যায়। শেরশাহ শাসন পরিচালনা ও রাজস্ব ব্যবস্থা নিয়ে কিছু সংস্কার তৈরি করেছিলেন।
শেরশাহ পাট্টা ও কবুলিয়ত নামে দুটি দলিল প্রচলন করেছিলেন। পাট্টায় কৃষকের নামে রাজস্ব কত দিতে হবে এবং কৃষকের জমিতে কতটা অধিকার থাকবে তা লেখা থাকত। এবং সেই রাজস্ব কৃষকরা কবুল করে কবুলিয়ত নামে দলিলে স্বীকার করে রাষ্ট্রকে দিত।
শেরশাহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটান এবং সড়কপথ তৈরি করেন। তিনি বাংলার সোনার গাঁ থেকে উত্তর পশ্চিম সীমান্তে পেশোয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত একটি সড়কপথ সংস্কার করেন। তিনি তার তৈরি সড়কপথের নাম নেন সড়ক-ই-আজম। এছাড়াও তিনি নানা জায়গায় সড়কপথ তৈরি করেছিলেন। যেমন আগ্রা থেকে যোধপুর এবং চিতোর পর্যন্ত তিনি সড়কপথের উন্নতি ঘটান। এছাড়াও পরে তিনি লাহোর থেকে মুলতান পর্যন্ত বড়ো বড়ো রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন, এবং পরে তিনি রাস্তার বদলে রোড নির্মাণ করেছিলেন সেটি গ্র্যান্ড ট্র্যাঙ্ক রোড নামে খ্যাত ছিল।
তিনি সকল মানুষ এবং বণিক ও পণিকদের যাতে কোনো রকম অসুবিধা না হয়, তারা যাতে সকল প্রকারভাবে সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারে তার জন্য রাস্তার ধারে বড়ো বড়ো সরাইখানা তৈরি করেছিলেন।
তিনি যোগাযোগ ব্যস্থার উন্নতি ঘটান। তখন টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ ছিল না, তিনি ঘোড়ার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন।
তিনি তাঁর সৈন্যদের সবসময় নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি যাতে সৈন্যরা তাঁর নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকে তার জন্য তিনি দাগ ও হুলিয়া ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।
মোঘলদের মেবার অভিযান :
আকবর চিতোর জয় করার আগেই চিতোরের রানা উদয় সিংহ চিতোর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে আকবর তার বীরত্বের সঙ্গে চিতার জয় করেছিলেন। আকবর চেয়েছিলেন যে রাজপুতদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে তাদের নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসতে। তাই তিনি রাজপুতদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। রানা প্রতাপ সিংহ ছিলেন উদয় সিংহের পুত্র। তিনি মোঘলদের কাছে অধীনতা স্বীকার করতে রাজি হলেন না। ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে হলদিঘাটের যে যুদ্ধ ঘটেছিল সেই যুদ্ধে আকবর রাণা প্রতাপকে পরাজিত করেছিলেন। রাজা প্রতাপের বিরুদ্ধে আকবর এই যুদ্ধে আজমিরের রাজা মানসিংহকে ৫০০০ সৈন্যসমেত পাঠিয়ে ছিলেন যুদ্ধের জন্য। প্রকৃতপক্ষে রাজা মানসিংহ কিন্তু রাজপুত ছিলেন। বাজপুতশক্তি মিলিত হয়ে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। মুঘল সৈন্যরা যাতে খাবার না পায় তার জন্য রানা প্রতার চিতোর পর্যন্ত গোটা এলাকার ফসল নষ্ট করে দেন। রানা প্রতাপের রাজধানী ছিল কুম্ভলগড়। সেখান থেকে তিনি ৩০০০ জন সৈন্য নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছান। তার সঙ্গে আফগানিস্তানের কয়েক সর্দার ছিলেন। তবুও রানা প্রতাপ যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন। পরাজিত হয়েও মোঘলদের বিরুদ্ধে রাণা প্রতাপ বারবার রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।
আকবরের নবরত্ন :
আকবর ছিলেন অত্যন্ত মহান ও শক্তিশালী যোগা। তিনি তাঁর রাজসভায় সকল প্রজা এবং সৈন্যদের সান দিতেন। এছাড়াও আকবরের রাজসভায় নানা বিশিষ্ট মানুষের আগমন হত তাদের একত্রে বলা হয় নবরত্ন। এদের মধ্যে একজন ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ তিনি হলেন বীরবল।বীরবলের অনেক গল্প থেকে জানা যায় তিনি খুব বুদ্ধিমান ছিলেন। জানা যায় যে তার বুদ্ধির জোরেই তিনি আকবরের সভায় নিজের স্থান তৈরি করেছিলেন। বীরবলের আসল নাম হল মহেশ দাস। আকবর তাকে বীরবল নাম দেন। এছাড়াও আকুবর নানারকম বুদ্ধির কৌশলের ফলে তাঁকে রাজা উপাধিও দেওয়া হল। তিনিই ছিলেন আকবরের সময় ওয়াজির-এ আজম বা প্রধানমন্ত্রী। বীরবল জন্মগ্রহণ করেছিলেন মধ্যপ্রদেশে এবং তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান। এখানে বীর এবং বল যে শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়েছে তাতে বুদ্ধিমান বোঝাতে বলা হয়েছে।
আবুল ফজল ও কাদির বদাউনি:
অকবরের আমলে দুজন বিখ্যাত ঐতিহাসিক ছিলেন। একজন হলেন আবুল ফজল আল্লামি (১৫৫১ ১৬০২ খ্রি.), আর একজন হলেন আবুল কাদির বদাউনির (১৫৪০-১৬১৫খ্রিঃ)। আবুল ফজল তাঁর বইতে অকবরের গুণাবলি সম্বন্ধে লিখেছিলেন। সে যুগের ইতিহাসে যেমন ভালো কিছু ছিল তেমন নানারকম সমস্যাও ছিল। তাই তাদের লেখায় সেই যুগের ইতিহাসের ভালোকথা ও সমস্যার কথাও লেখা হয়েছিল। এছাড়াও নানারকমের সমালোচনার কথা জানা যায় ঐতিহাসিক আব্দুল কাদির বদাউনির লেখায়। এরা বুজনেই এসেছিলেন আকবরের দরবারে। আবুল ফজল ও আকবরের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তিনি আকবরের প্রিয় পাড় হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু আকবর সভার দুই ধরনের বিবরণই এদের দুজনের লেখায় দেখতে পাওয়া যায়।
বলখ (বাল্খ) এবং বদংশান:
মুঘলদের প্রাচীন ও আদি বাসভূমি ছিল মধ্য এশিয়ার সমরখন্দে। সেখানে তিনি নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করার চেষ্টাও করেছিলেন কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। বুখরার উজবেগ শাসক মহম্মদের অধীনে ছিল মধ্য এশিয়ার বলখ এবং বদখশান। তাঁর পুত্র ছিল আব্দুল আজিজ। পিতা এবং পুত্রের সম্পর্ক ভালো না থাকার ফলে পুত্র আব্দুল আজিজ তাঁর পিতা মহম্মদকে পরাজিত করেছিলেন। কিন্তু পরে পিতা ও পুত্রের সম্পর্ক ভালো হয়ে ওঠে। এর ফলে মুঘলরা বাল্খ আক্রমণ করে।
ওয়াতন :
আধুনিক জয়পুর শহরের নিকটবর্তী এলাকা অন্বর বা আমের ওয়াতন ছিল মানসিংহ বংশের রাজা ভারমল ও ভগবন্ত দাস-এর। ওয়াতন কথাটির অর্থ হল নিজের এলাকা, ভিটে বা স্বদেশকে বোঝায়। মারওয়াড়: রাজস্থানে মারওয়ার শব্দটি ব্যবহার করা হয়। রাজস্থানের ভাষায় 'ওয়ার' শব্দটির অর্থ একটি বিশেষ ও নির্দিষ্ট অঞ্চল। মরু অঞ্চল থেকে 'মরুওয়ার' শব্দটি নেওয়া হয়েছে।
মুঘল সাম্রাজ্যের পতন
দাক্ষিণাত্য ক্ষত:
খ্রিস্টিয় সপ্তদশ শতকে ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকাল শুরু হয়। সেই সময়ে অনেক বেশি মারাঠা শক্তি বেড়ে গিয়েছিল। মারাঠা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। তাদের দমন করাও খুব সহজ ছিলনা। ঔরঙ্গজেবের সময়ের মূঘল সাম্রাজ্যের আয়তন সবচেয়ে বড়ো হয়ে ওঠে। যা আগে কখনও হয়নি। তার সময়ে মুঘল সমাজের দুটি অঞ্চল দখল করেছিল একটি হল বিজ্ঞাপুর অপরটি গোলকোল্ডা। ঔরঙ্গজেব চেয়েছিলেন দক্ষিণী রাজ্যগুলিকে জয় করে সেখানে বেশি পরিমাণে রাজস্ব আদায় করবে। কিন্তু অবশেষে বাদশাহ ঔরঙ্গজেবের আশাপূর্ণ হননি। মারাঠাদের সাথে দাক্ষিণাত্যের যুদ্ধে প্রচুর রক্তক্ষয় হয় এবং মুঘলরা আর্থিক দিক। থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত মারাঠা নেতা শিবাজিকে স্বাধীন রাজা হিসাবে মেনে নিতে হয় কিন্তু মুঘল সাম্রাজ্য থেকে দাক্ষিণাত্যের ক্ষত মিলল না। দাক্ষিণাত্যে ঔরঙ্গজের পাঁচশো বছর ধরে যুদ্ধ করে দক্ষিণাত্যেই মারা যান (১৭০৭ খ্রি.)।
মন্তব্যসমূহ