অষ্টম অধ্যায়
মুঘল সাম্রাজ্যের সংকট
মুঘল সাম্রাজ্যের সংকটের কারণ
গোড়ার কথা : মুঘল সাম্রাজ্যের সংকট বোঝার জন্য ঐ সময়ের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন লক্ষ করা প্রয়োজন। ঔরঙ্গজেবের সময়ে সাম্রাজ্য অনেক বড়ো হয়ে পড়েছিল। মনসব নিয়ে অভিজাতদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। সময় মারাঠাদের মতো এক আঞ্চলিক শক্তির উত্থান হয়। মুঘলদের সার্বভৌমত্ব এরা অস্বীকার করে। শিখদের সঙ্গে মুঘলদের সম্পর্কও তিক্ত হয়ে উঠেছিল। মুঘলরা এতোদিন ধরে যে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিল তা সেই ধারণায় আঘাত করা হয়। প্রতিরোধগুলির চরিত্র এক-এক ক্ষেত্রে এক এক রকম ছিল। পৃথক রাজ্যগঠনের স্বপ্ন মারাঠারা দেখেছিল। মুঘলদের শাসনকালের সময় জট এবং সৎনামি বিদ্রোহ সেই আমলে কৃষি ব্যবস্থার সংকটের দিকটা তুলে ধরেছিল। জঠদের মতো অনেকেই আঞ্চলিক স্বাধীনতা চেয়েছিল। তবে এই আন্দোলনগুলিকে ধর্মীয় প্রতিরোধ বলা উচিত নয়।

শিবাজীর নেতৃত্বে মারাঠাশক্তি ও মুঘল রাষ্ট্র পুনে এবং কোঙ্কন অঞ্চলে। মারাঠারা বাস করত। এই মারাঠাদের মধ্যে অনেকেই গোলকোল্ডার এবং বিজাপুর রাজদরবারে উচ্চপদে ছিল। কিন্তু এই মারাঠাদের নিজস্ব কোন্ রাজ্য বলে কিছু ছিল না। তাতরপর শিবাজী মারাঠাদের মধ্যে খ্রিস্টীয়, সপ্তদশ শতকে জোটবন্ধ করেছিল। শিবাজীর বাবার নাম শাহজি ভোঁসলে এবং মায়ের নাম জিজাবাঈ ছিল। শাহজি ভোঁসলে বিজাবাঈ এবং তার শিক্ষক বাদাজি কোল্ডদেবের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। শিবাজী বিজাপুরের সুলতানের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে সেখান বেশ কিছু জমিদারকে তিনি নিজের-আওয়েতে নিয়ে আসেন। সুলতান শিবাজীকে দমন করার জন্য আফজল মানকে পাঠানো হয়। আফা খান সুলতান শিবাজীকে হত্যা করার অন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আগেই শিবাজী সতর্ক ছিলেন এবং আফজল খানের শিবাজিকে হত্যা করার চেষ্টা বিকল হয়ে যায়। এই সতর্কতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি উল্টে তার বাঘনখ নামে অস্ত্রটি দিয়ে আফজল খানকে শিবাজী হত্যা করেন। ঔরঙ্গজেবের পক্ষে শিবাজীর এই ক্ষমতা বৃদ্ধি মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। বন্দর নগরী সুরাটকে শিবাজী দুবার আক্রমণ করেন, তিনি শুধু আক্রমণ নয় সেখানে লুটপাট করেন। ঔরঙ্গজের শিবাজীকে দমন করার জন্য তিনজনকে পাঠান। সেই তিনজন হল মুয়াজ্জম, শায়েস্তা খান এবং জয়সিংহ, শিবাজীকে জয়সিংহ ১৬৩৫ মিঃ পুরষ্কারের সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। শিবাজীর এই চুক্তি অনুযায়ী মুঘলদের ২৩ টি দুর্গকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এই সময়ের পর শিবাজীকে আগ্রার মুঘল দরবারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে পৌঁছালে তাঁকে অপমান করা হয়। তারপর শিবাজীকে আগ্র দুর্গে বন্দী করা হয়। কিন্তু সেই অঙা দুর্গ থেকে শিবাজী একটি ফলের ঝুড়িতে করে লুকিয়ে পালিয়ে আসেন। সেখান থেকে শিবাজী যখন দাক্ষিণাত্য পৌঁছায় তখন মুখলদের সাথে আবার তার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে একটি ভালো বড়সড়ো প্রতিরোধী আন্দোলন ছিল শিবাজীর নেতৃত্বে মারাঠাদের উত্থান। শিবাজী একটি সুপরিকল্পিতভাবে এবং স্বাধীন শাসনব্যবস্থার সূচনা করেন। তারপর (১৬৭৪ খ্রিঃ) রায়গড়ে শিবাজীর অভিষেক হয়। তার মানে তিনি যে অন্যান্য মারাঠা সর্দারদের থেকে আলাদা এর থেকে তা প্রমাণিত হয়। শিবাজীর আটজন মন্ত্রী ছিলেন। এই আটজন মন্ত্রীকে অষ্টপ্রধান বলা হতো। এই অষ্ট প্রধানের মধ্যে প্রধান ছিল পেশওয়া। মারাঠার নিজের রাজ্যকে স্বরাজ্য বলতো। মারাঠা সেনারা স্বরাজ্যের বাইরে এবং তার আশেপাশের মুখ এলাকাগুলি আক্রমণ করত এবং সেখান থেকে তারা কর আদায় করতো। মারাঠা রাজ্যে যে সকল সৈনিক স্বায়ীভাবে চাকরি করত তাদের বর্গি বলা হতো। এই সুলতান শিবাজির নেতৃত্বে মারাঠাদের জাতীয় চেতম জেগে ওঠে।
মাবলে ও পেশওয়া
মাবলে ও পেশওয়া: পুনের আশেপাশের অঞ্চলগুলিতে যখন শিবাজী আক্রমণ করেছিলেন, তখন তিনি একদল পদাতিক সেনা নিয়োগ করেন মালওয়া অঞ্চল থেকে। শিবাজীর নিয়োগ করা মালওয়া অঞ্চলের সেনাস মাবলে বা মাওয়ালি বলা হতো। এই মাবলে বা মাওয়ালি সেনাবাহিনীরা শিবাজীর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল।
শিবাজীর মৃত্যুর চল্লিশ বছর পরে পেশওয়াদের হাতে শাসন ক্ষমতা চলে আসে। সেই সরা মুঘল শাসনের খুব খারাপ অবস্থা। শিবাজীর মৃত্যু পঞ্চাশ বছর পরে পেশওয়া প্রথম বাকীরাত হিন্দু রাজাদের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং একটি হিন্দু সাম্রাজ্য গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। বাজীরাওয়ের এই হিন্দু রাজ্যের আদর্শকে হিন্দু পাদপাদশাহী বলা হয়। তার মানে তিনি ধর্মের নামে মুঘলদের বিরুদ্ধে অন্য রাজাদের জেটিবদ্ধ করতে চাইলেন।
শিখ শক্তি ও মুঘল রাষ্ট্র
শিখ শক্তি ও মুঘল রাষ্ট্র : শাহজাহান এবং জাহাঙ্গীরের আমলে শিখদের সঙ্গে মুঘলদের সংঘাত হয়। এই সংঘাতের চরিত্র ছিল রাজনৈতিক। পুকুর প্রতি শিখরা অনুগত ছিল তাই এই অনুগত নিয়ে অনেক সময়ে মুখল রাষ্ট্রের সাথে শিখদের স্বপ্ন বেঁধে যেতে। চতুর্থ গুরু রামনাসের ছেলে অর্জুন দেব খ্রিস্টীয় শোড়শ শতকের শেষের দিকে শিখদের গুরু হন। আর এই সময় থেকেই শিখদের বংশানুক্রমিকভাবে গুরু নির্বাচন করা শুরু হয়। গুরু অর্জুনের ছেলে গুরু হরগোবিন্দ একসঙ্গে দুটি তলওয়ার নিতেন। এতে তিনি বোঝাতে চাইতেন যে শুধু ধর্মের ক্ষেত্রেই নয়, তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতাও আছে। তার মানে বোঝাই যায় যে শিশুদের উত্থান অনেকটাই একটা স্বাধীন শক্তির উত্থানের মতোই হয়ে উঠেছিল। আর তা মুঘল সরকারের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। ঔরঙ্গজেবের ধর্মীয় নীতির বিরোধিতা করেন নবম শিখ গুরু তেগাহানুর। কিন্তু শুধু এই ধর্মীয় কারণেই মুঘল শিখ সংযত হয়নি। তেগবাহাদুর এক পাঠানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাঞ্জাবে মুঘল শাসনের বিরোধিতা করেছিলেন বলে শোনা যায়। মুঘলরা ভেগবাহাদুরকে বন্দি করে হত্যা করেন। ভেগবাহাদুরের মৃত্যুর পর বা এই ঘটনার পর শিখরা পাঞ্জাবের পাহাড়ি এলাকায় চলে যায় এবং সেখানেই দশম শিখ গুরু গোবিন্দ সিংহের নেতৃত্বে তার সঙ্ঘ বন্ধ হয়।
খালসা
খালসা : গুরু গোবিন্দ সিংহ ১৬৯৯ খ্রিস্টাব্দে খালসা নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন। এই খালসার কাজ ছিল শিখদের নিরাপদ রাখা। শিখদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ ছিল সামরিক প্রশিক্ষণ, গুরু গোবিন্দ সিংহ ইনি শিখদের পথ বা ‘পন্থ’ ঠিক করে দেন। গুরু গোবিন্দ সিংহ শিখদের পাঁচটি জিনিস তাদের কাছে সব সময় রাখতে বলেন আর সেই পাঁচটি জিনিস হল–বেশ, কচ্ছা, কঙ্গা (চিরুনী) কৃপাণ এবং কড়া। এছাড়াও শিখরা খলসাপন্হী পদবী 'সিংহ' ব্যবহার করতে শুরু করে, শিখনের মাঝে মধ্যেই পাহাড়ি হিন্দু রাজাদের সঙ্গে ছোটোখাটো যুদ্ধ হতো। এই শিখদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য মুঘল সরকারের কাছে থেকে হিন্দু রাজারা সাহায্য চেয়েছিল। শিখ সামরিক শক্তির উত্থান মেনে নেওয়া মুঘলদের পক্ষেও সম্ভব ছিল না। আর এরজন্য ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে শিখদের সংঘাতের চরিত্র ছিল মূলত রাজনৈতিক, গোবিন্দ সিংহের মৃত্যুর পর এই লড়াই তার শিষ্য বান্দা বাহাদুর চালিয়ে যান। গুরু গোবিন্দ সিংহ মুঘলদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারেননি এ কথা যেমন ঠিক তেমনি কিন্তু উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে মুঘলদের নিয়ন্ত্রণ শিথিল বা দমে গিয়েছিল। মানুষের মধ্যে সমতার কথা বলতে এই শিখ ধর্মীয় আন্দোলন। তবে অনেক সময়ে সামরিক শক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে এটি একটি প্রতিরোধী আন্দোলন হিসেবে রাজনৈতিক রূপ নিত।
মুঘল যুগের কৃষি সংকট
অন্যান্য কয়েকটি বিদ্রোহ: জাঠরা দিল্লি-আগ্রা অঞ্চলের প্রধানত কৃষক ছিল। এই জাঠানের মধ্যে শুধু কৃষক নয় অনেকে আবার জমিদারও ছিল। জাহাঙ্গির ও শাহজাহানদের আমলে রাজস্ব দেওয়া নিয়ে জাঠাদের সঙ্গে মুসলমানদের সংঘাত হতো। জাঠারা ঔরঙ্গজেবের আমলে তার স্থানীয় এক জমিদারের নেতৃত্বে জোটবন্ধ হয়ে বিদ্রোহ করে। একটি আলাদা রাজ্যে গড়ে তুলতে চেয়েছিল এই কাঠারা। মুঘলদের বিরুদ্ধে জাঠ প্রতিরোধ ছিল একদিকে কৃষক বিদ্রোহ অন্যদিকে একটি আলাদা গোষ্ঠী পরিচয়ে জাঠারা একজোট হচ্ছিল। মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে মথুরার কাছে নারনেটল অঞ্চলে একদল কৃষক অস্ত্র ধরে। এই এক দল কৃষক সৎনামি একটি ধর্মীয় গোষ্ঠির মানুষ ছিল। উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে পাঠান উপজাতিরা মুঘলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। মুঘল প্রশাসনের কেন্দ্রীয় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন হল এই সকল বিদ্রোহগুলি। শুধু তাই নয় ঔরঙ্গজেবের শাসনকালের সময় থেকে কৃষি সংকটও বেড়ে গিয়েছিল। এই কৃষি সংকট এটিও একটি কারণ। এটিও ছিল সেই বিদ্রোহগুলির মধ্যে।
জায়গিরদারি ও মনসবদারি সংকট, কারণ ও প্রভাব মনসবদারি ও আয়গিরদারি ব্যবস্থার সমস্যা
জায়গিরদারি ও মনসবদারি সংকট, কারণ ও প্রভাব মনসবদারি ও আয়গিরদারি ব্যবস্থার সমস্যা শাহজাহানের সময় থেকেই দেখা দেয়। অনেক সময় মনসবদারদের তাদের কাজ বা তাদের পদ অনুযায়ী যা তাদের বেতন বা পরিশ্রমিক পাওয়ার কথা, তা দেওয়া যেত না, এমনও হতো যে অনেক সময় আর কৃষক বিদ্রোহের জন্য রাজস্ব আদায় করা যেত না, শুধু তাই নয় অনেক সময় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করাও সবসময় সম্ভব হচ্ছিল না, মনসবদারেরা বেতন না পেলে তাদের যতজন ঘোড়সওয়ারের দেখাশোনা করার জন্য লোক থাকতো তখন আর ততজন দেখাশোনা করত না। তার মানে খাতায় কলমে হিসেবের সঙ্গে আসলে যা হচ্ছে, তার তাফাৎ বেড়েই চলেছিল। এই সমস্যাটি ঔরঙ্গজেবের শাসনকাপের সময় আরও বেড়েছিল।
জায়গিরদারি এবং মনসবদারি সংকটের সঙ্গে সে যুগের কৃষি সংকট যুক্ত। ফসলের উৎপাদন এই সময় বেড়েছিল। ফসল উৎপাদন করলে কী হবে? কৃষির উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছিল। মুঘল মনসবদারা মারাঠা সর্দারদের সাহায্য নিতে যখন মুঘল মনসবদারী দাক্ষিণাত্যে যুদ্ধের সময় রাজস্ব আদায় করতো, এর থেকে বোঝা যায় যে ওই সকল অঞ্চলে আলগা হয়ে গিয়েছিল মুঘলদের নিয়ন্ত্রণ, এদিকে আবার খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকে জিনিসপত্রের দাম আবার দেড়ে যায়। এই মূল্য বৃদ্ধির কারণে অভিজাতরা জমি থেকে তাদের আয় আরও বাড়াতে চাইলেন। অভিজাতরা ফ্লমিদার এবং কৃষিদের উভয়ের উপরে চাপ বাড়াতে থাকে। এই কারণে কৃষকরাও বিদ্রোহের পথে নেমে যায়। এই বিদ্রোহতে অনেক সময় জমিদাররাও কৃষকনের সাহায্য করত।
এমনো হয়েছে অনেক সময় কৃষকরা রাজস্ব না দিয়ে তার গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেত। তাঁদের পালিয়ে যাওয়ার ফলে এখন তাদের ফেলে রাখা জমিতে আর চায় হতো না। আর চাষ না হলে রাজস্ব আদায় করা যাবে না। তাই যে ফসল মনসবদার এই সকল কমিতে জায়গির পেত তখন তারাও ভালোভাবে আর ঘোড়সওয়ারের ভরণপোষণ করতে পারত না, মুঘলদের হাতে দক্ষিণাত্যের বিশাল অঞ্চল এসেছিল যখন ঊরস্কাভ্রের বিজাপুর এবং গোলকোন্ডা জয় করলো। এই অঞ্চলের সব থেকে ভালো জমিগুলি ঔরঙ্গজেব খাস জমি বা খালিসা জমি হিসেবে রেখেছিলেন। সেই জমিগুলি জায়গির হিসেবে দেওয়া হতো না। বরং এই খাস জমির রাজস্ব সরাসরি কেন্দ্রিয় কোষাগারে জমা হতো। সুতরাং জমির অভাব ছিল না তবে ডায়গির হিসেবে দেওয়া যায়। এরকম ভালো জমির পরিমাণ কমে গিয়েছিলো। জমির উর্বরতা মুখল শাসকেরা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেও বাড়াতে পারে নি। আর তার জন্য এই সমস্যা আরো গভীর হয়ে উঠেছিল।
মুঘল দরবারে দলাদলি
মুঘল দরবারে দলাদলি : ভালো জায়গির পাওয়ার জন্য মনসারদের মধ্যে সপ্তদশ শতকের শেষে ষড়যন্ত্র ও লড়াই শুরু হল। দরবারি রাজনীতিতে তুরানি রাজপুত্র, ইরানি, মারাঠা এবং অন্যান্য গোষ্ঠির মধ্যে সংঘাত শুরু হল। এই মনসবদারি এবং জায়গিরদারি সংকটের জন্য কোনো একজন মুঘল শাসক দায়ী ছিল না।অনেকদিন ধরে নানান রকম সমস্যার জট পাকিয়ে এই সংকট তৈরি হয়েছিল,
এই মুঘল সাম্রাজ্য যে কতটা শক্তিশালী ছিল তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক আছে ঐতিহাসিকদের মধ্যে।মুঘল বলশালী ছিলো বলে একাল ঐতিহাসিক মনে করেন। এই মুঘলদের তৈরি করা সাম্রাজ্যের মধ্যেই বর্তমান ভারতের রাষ্ট্রের বীজ লুকিয়ে আছে। আসামুদ্র হিমাচল মুঘল শক্তির ক্ষমতা ছড়িয়ে আবার অন্যদিকে আর এক ঐতিহাসিক দল মনে করেন যে মোটেও এতো ক্ষমতা মুঘল রাখতো না, তাদের এই এক ঐতিহাসিকের মতে মুঘল সাম্রাজ্যকে এ দেওয়াল থেকে ও দেওয়াল পর্যন্ত বিস্তৃত একটি নিশ্ছিদ্র গালিচার সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়। উত্তর ভারতে মুঘলদের আধিপত্য থাকলেও অন্যান্য অঞ্চলে তাদের ক্ষমতা ছিল সীমিত।
মন্তব্যসমূহ