নবম অধ্যায় । আজকের ভারত : সরকার গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন । সপ্তম শ্রেণী । ajker bharat : sarkar ganatantro o swayattosahon

নবম অধ্যায়
আজকের ভারত :
সরকার গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন



মানুষ আধুনিক যুগের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে জীবনে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু অঙ্গ এই আধুনিক যুগেও
আগের অনেক পুরোনো কিছু কাভাস রয়ে গেছে। এখনকার ধারণা বা চিন্তা ভাবনা অনেক ক্ষেত্রেই সেই পুরনো দিনের ধারণা বা চিন্তা ভাবনারই মতন তাঁর মানে মানুষ মতই আধুনিক হয়ে থাক না কেন সমাজের অনেক ক্ষেত্রেই সেই আগেকার ধারণা মেনেই জীবন চলার পথে এগোচ্ছি। সময়ের সাথে সাথে যেমন মানুষের ভাবনা ডিস্তা, চলাফেরা, থাকা-খাওয়া ইত্যাদি সব সময়ে সাথে সাথে পরিবর্তন হচ্ছে কিন্তু এই পরিবর্তনের মধ্যেই রয়ে গেছে আগেকার ধারণাগুলি।

আগেকার দিনের রাজারা যখন তাদের রাজত্ব অনেক বড়ো হয়ে যেত বা তার একার পক্ষে সেটা চালানো সম্ভব হতো না তখন তারা সেই রাজত্ব চালানোর জন্য অনেকগুলি রাজাদের মধ্যে তা ভাগ করে দিতেন। উদাহরণ হিসেবে যদি বলি বহুবছর আগে শেরশাহ নামে এক রাজা রাজত্ব করত। তার রাজত্ব এতো বড়ো হয়ে পড়েছিল সে তার একার পক্ষে সেটা সামলানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তখন তিনি তার অধিকৃত অঞ্চলগুলিকে অনেকগুলি রাজা বা সরকারের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। এর ফলে তার আর শাসনের অসুবিধা হলো না। আজ ঠিক আগের মতোই আমরা সরকার গড়ে তুলি দেশকে চালাবার জন্য।

আজকের ভারত : সরকার গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন



সরকার এর ধারণা কিভাবে এল ?


 সরকার কথাটির অর্থ হলো শাসনকর্তা এই শব্দটি ফার্স্ট ভাষা থেকে এসেছে। আমরা সরকার শব্দটিকে ইংরাজী ভাষার Government বলে থাকি , আগেকার দিনে রাজারা যুদ্ধ করতো এবং যুদ্ধ করার পর যখন তারা যুদ্ধে জয়লাভ করত সেই অঞ্চলগুলিতে তারা শাসন বলতো। তারা নিজেদের বল প্রয়োগ করে রাজার পদবি আদায় করতো, কিন্তু আজকের এই দিনে তা হয় না। আমাদের এই ভারতে আমরা ভারতবর্ষ নিজেদের রাজা বা সরকারকে নির্বাচিত করে থাকি। আমাদের পছন্দ মতোই কোন একজনকে আমাদের দেশকে শাসন করে থাকে। শুধু ভারত কেন প্রত্যেকটা স্বাধীন দেশে একটি
করে সরকার থাকে এবং সেই দেশেরই নাগরিকের তাকে সরকার হিসেবে নির্বাচন করে থাকে। 

ভারতকে কেন গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় বলা হয় ?



আমাদের ভারত হল একটি গনতন্ত্র দেশ তাঁর কারণ হলো আমরা অমাদের সরকার নিজেরা নিঃখেই নির্বাচন করে থাকি। জনগণের মতে নির্বাচিত করা সরকার ঠিক করি বলেই এটি গণতন্ত্র  শব্দ  'তন্ত্র' শব্দটির অর্থ হলো ব্যবস্থা। আমরা যে দেশেই বসবাস করি না কেন সেই ক্লাশে থাকার জন্য কিছু নিয়ম আছে যেমন মানুষকে এক জায়গায় থাকতে হলে কিন্তু নিয়ম মেনে চলতে হয়। এই নিয়ম কানুন বা আইন শৃঙ্খলা বই কিছু বলে থাকি এইগুলি একটা বইতে লেখা আছে সেই
নিয়মগুলিকে আমরা সংবিধান বলে থাকি। এই সংবিধান মেনেই মানুষ দিনের পর দিন জীবনযাপন করে চলছে। শুধু আমাদের ভারতেই এই সংবিধান নেই প্রত্যেকটি দেশেই এই সংবিধানটি আছে যার নিয়ম অনুযায়ী মানুষ বসবাস করে চলেছে। আবার অনেক দেশেই এই সংবিধান কম কিছু নেই। সেইখানে সেই আগের নিয়ম মেনেই মানুষ বসবাস
করে চলেছে। এই সংবিধানের বিধান" শব্দটি মানে হলো নিয়ম। থাকে আমরা নিয়ম কানুন বা আইন শৃঙ্খলাও বলে থাকি। আমাদের ভারতবর্ষের মানুষেরা এই সংবিধান মেনেই ভারতে বসবাস করে থাকে।

আমাদের দেশের  সংবিধান



 আমাদের দেশের  সংবিধান একটি লিখিত সংবিধান আছে। যার প্রধান রুপকার হলেন ড. বি. আর, আম্বেদকর। ভারতে  ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি এই সংবিধান কাযকর হয়। আমাদের
এখানে দেশের জনগণ তাদের ইচ্ছা মতন দেশের কোন এক ব্যক্তিকে শাসন করার জন্য নির্বাচিত করেন । সংবিধানে এত ধারা-উপধারা আর পৃথিবীর অন্য কোনো নির্বাচন করার অধিকার আছে। শুধু তাই নয় দেশের জনগণ  প্রত্যেক পাঁচ বছর অন্তর ভোটের মাধ্যমে নিজেদের শাসক
বেছে নেওয়ার অধিকারের কথা বলা আছে।

আমাদের ভারতবর্ষে একটাই কেন্দ্রীয় সরকার আছে। ভারতবর্ষ খুব বড় দেশ তাই শুধু কেন্দ্রীয় সরকার তা শাসন করা একার পক্ষে সম্ভব নয় কারণ এই ভারতে অনেকগুলি রাজ্য আছে আর এই প্রত্যেকটি রাজ্যতে একটি করে সরকার আছে। রাজ্য দেখাশোনার জন্য সরকার থাকে তাকে রাজ্য সরকার বলা হয়। আমাদের দেশের জনগণেরা যেমন সংবিধান অনুসারে কেন্দ্রের জন্য কেন্দ্র সরকারকে বেছে নেন তেমনি সেই রাজ্যের মানুষেরা ভোটের মাধ্যমে তাদের রাজ্য সরকারকে বেছে নেয়। কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকারকে মানুষ ভোট প্রয়োগ করে শাসকের আসনে বসান।

           কেন্দ্র সরকার বা রাজ্য সরকার যাকে দেশের বা রাজ্যের মানুষ তাদের শাসনকর্তা হিসেবে ভোট দিনে শাসকের আসনে বসিয়েছেন এই দুই সরকারের কিছু বাস্তব বা ক্ষমতা আছে। এই দুই সরকারের কাজ বা ক্ষমতা সংবিধানে লেখা আছে , যার অনুসারে এই দুই দরকার মানে কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার কাজ করবে। যে দেশে একসাথে এই কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার দু-ধরনের সরকার একই শাসনব্যবস্থায় থাকে তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় বলা হয়। তার মানে হলো ভারত একটি গণতন্ত্র দেশ। তার সাথে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয়। কারণ দেশের জনগণ একদিকে যেমন নিজেদের শাসককে ভোটের মাধ্যমে পছন্দ করেছে বলে এটি গণতন্ত্র দেশ আবার অন্যদিকে দু-ধরনের সরকার মানে কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকার দুধরনের সরকারই এই শাসনব্যবস্থায় আছে বলে এটি একটি যুক্তরাষ্ট্রীয়।


দেশের জনগণেরা যে সরকার গঠন যা নিয়োগ করে, সেই সরকারের জনগণের বা দেশের প্রতি কিছু দায়িত্ব থেকে থাকে। দেশের জনগণেরা দেশকে সঠিকভাবে চালিত করার জন্য একটি স্থায়ী, সুষ্ঠু এবং অবশ্যই রুচিশীল সরকার নির্বাচিত করে থাকে। সরকারের কাজ হলো দেশের শান্তি বা নিয়ম শৃঙ্খলাকে সুষ্ঠুভাবে বজায় রাখা, দেশের কর আদায় করা এবং সেই কর দিয়ে দেশের উন্নয়ন কর। দেশের জনগণের যাতে কোন অসুবিধা না হয় তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখে জনকল্যানকামী কাজ করা। এসব কাজকর্ম বা দায়িত্ব সরকার সংবিধান অনুসারে করে থাকে। যদি কোন সরকার সংবিধানের নিয়মের বর্হিভূত কিছু বা কোন নিয়ম পাল্টাতে পারবে না সবকিছু তাকে সংবিধান অনুসারেই করতে হবে।

আইন বিভাগ,শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ


            আমাদের সরকারে কাজকর্ম চালানোর জন্য তিনটি বিভাগে রয়েছে। সেই তিনটি বিভাগ হলো আইন বিভাগ,শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ এই তিনটি দায়িত্ব বা কাজগুলি সবই হবে ভারতের সংবিধান অনুসারে। সেই কাজগুলি হলো-
■ আইন বিভাগ- এই আইন বিভাগে দেশ কীভাবে পরিচালনা হবে তা এখানে তৈরি হয়।
■শাসন বিভাগ – এই শাসন বিভাগে আইন বিভাগের তৈরি করা আইন কীভাবে সরকার পরিচালনা করবে তা গঠন হয়ে থাকে।
■ বিচার বিভাগ –ভারতের সংবিধান অনুসারে দেশ শাসন হচ্ছে কিনা বাণের স্বার্থ রম্প হচ্ছে কিনা এই সমস্ত কিছু দেখে করে বিচার বিভাগ। শুধু তাই নয় কেউ যদি কোনো নিয়ম ভেঙে কিছু করে থাকে তার প্রতি ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব থাকে এই বিচার বিভাগের ওপর।

প্রজাতন্ত্র দিবস

স্বাধীনতার তিন বছর পরে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ নভেম্বর সংবিধান গ্রহণ করা হয় এবং তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি ওই সংবিধান ধার্য করা হয়। তারপর থেকে ২৬ জানুয়ারি আমরা প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করে থাকি।

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ




প্রত্যেকটি দেশেরই বিচার বিভাগতে বাকি দুটি বিভাগ আইন ও শাসন বিভাগ থেকে আলাদা রাখা হয় তার কারণ দেশের সুবিচারের পথ বন্ধ না হয় যাকে এক কথায় বলা হয় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ। এই ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ শব্দটির অর্থ হল আলাদা করা। উদ্দেশ্য হল গণতন্ত্র যাতে মজবুত থাকে সেই কারনেই এই নীতি নেওয়া হয়। তিনি প্রথম এই নীতির কথা বলেছিলেন তিনি ছিলেন ফ্রান্সের এক দার্শনিক যার নাম ছিলো মন্ডেস্কু। 

স্বায়ত্তশাসন কাকে বলে ? স্বায়ত্তশাসন কি ? 

 
আমাদের দেশের নাগরিকরা যে শুধু তাদের শাসককে নির্বাচন করে তা না। তার নিজেরাও এই শাসনে অংশ নিয়ে থাকে আর এই সরাসরি শাসনে অংশগ্রহণ করাকেই 'স্বায়ত্তশাসন' । আমাদের পশ্চিমবঙ্গে দুরকমের স্বায়ত্তশাসন দেখা যায়। এই দুই রকম স্বায়ত্তশাসন হল পৌরসভা এবং গ্রাম পঞ্চায়েত। এই ক্ষেত্রে আমরা আগেকার ইতিহাসের কিছু আভা দেখতে পাই যেমন যুগেতেও ছিল সভা ও সমিতি। এই স্বায়ত শাসনের 'স্ব' শব্দটির অর্থ হল নিজের এবং 'আয়ত্ব' মানে হল অধীনে। পুরো কথাটার মানে দাঁড়ায় নিজের অধীনে।

পশ্চিমবঙ্গের স্বায়ত্তশাসন


আমাদের পশ্চিমবঙ্গে সেই স্বায়ত্তশাসন সেই দুভাগে ভাগ রয়েছে মানে--পৌরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়ে এই পৌরসভা থাকে ছোটো ছোটো শহরে বা নগরে। পৌর কথাটার মানে হল নগর। সেই অঞ্চলে পৌরসভা থাকে সেই অঞ্চলের বাসিন্দারা যাদের আঠারো বছর বা তার বেশি বয়স হয়ে থাকলে তারা ভোট দিয়ে নিজেদের পৌরসভার শাসক বেছে নেয়। যিনি পৌরসভার শাসনকর্তা তাকে পৌরপ্রধান বলা হয়। এই পৌরপ্রধানের সেই নগর বা শহরের প্রতি কিছু কাজ থেকে থাকে। যেমন তার কাজ হল শহরের উন্নয়ন করা। মানুষের মধ্যে শান্তি বজায় রাখা। সেই শহরের পানীয় জল ঠিকভাবে সরবরাহ করা, শহরের রাস্তাটি উন্নয়ন করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রাখা শুধু তাই নয় শহরের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষাদানের জন্য বিদ্যালয় গড়ে তোলা, সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতাল গড়ে তোলা এই সব হল এক পৌর প্রধানের কাজ। আমাদের শহরের বা নগরের যাতে ভালো হয় তার দায়িত্ব দেওয়া হল পৌর প্রধানের কাজ।
শহরে বা নগরে ঠিক যেমন পৌরসভা এবং তার পৌরপ্রধান থেকে থাকে ঠিক তেমনি গ্রামের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত থাকে। গ্রামের বাসিন্দারা একই ভাবে ভোটের মাধ্যমে নিজেদের গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচিত করে থাকে। একজন পৌর প্রধানের যা যা করণীয় শহরের বা নগরের উন্নয়নের জন্য ঠিক তেমনি গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানের সেই একই দায়িত্ব থেকে থাকে তার গ্রামের প্রতি। যেমন গ্রামের পথঘাটের উন্নয়ন করা, রাস্তা-ঘাট পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রাখা, গ্রামের শাস্তি ও নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ঠিকভাবে পানীয় জল সরবরাহ করা, বিদ্যালয় ও হাসপাতাল গড়ে তোলা ইত্যাদি।


আমাদের অনেকগুলি গ্রাম নিয়ে একটি ব্লক গঠিত হয়ে থাকে। সেই ব্লগুলির দেখাশোনার দায়িত্ব থাকে পঞ্চায়েত সমিতির ওপর আবার কয়েকটি ব্লক নিয়ে গঠিত হয় 'জেলা'। আর এই জেলার দেখাশোনার দায়িত্ব থাকে জেলা পরিষদের হাতে। তার মানে যেমন পৌরসভার ভার থাকে পৌরপ্রধানের হাতে, গ্রাম পঞ্চায়েতের ভার থাকে। গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানের হাতে ঠিক তেমন ভাবেই ব্লকের দায়িত্ব থাকে পঞ্চায়েত সমিতির হাতে এবং জেলার দেখাশোনার দায়িত্ব থাকে জেলা পরিষদের হাতে।
এই ভাবেই দেশের জনগণের সরাসরি যোগদানের জন্য শহরের বা গ্রামের গণতন্ত্র ভালোভাবে গড়ে ওঠে। 

গণতন্ত্র কি ? গণতন্ত্র কাকে বলে ? 


গণতন্ত্র  আমাদের ভারত হল একটি গণতন্ত্র রাষ্ট্র তার কারণ হল আমাদের দেশের জনগণেরা নিজেরা নিজেদের শাসনকর্তাকে বেছে নেয়, যাকে সরকার বলি। এই সরকারকে আমরা ভোটের মাধ্যমে বেছে নিয়ে থাকি। সংবিধান অনুসারে। শুধু এই আজকের আধুনিক দিনগুলিতে এই সরকার বেছে নেওয়ার প্রথা শুরু হয়নি। শোনা যায় আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এই সরকার নির্বাচন করার প্রথা শুরু হয় গ্রিস'দেশে এথেন্সের মধ্যে। সেই দেশের লোকেরা একটি কলসি নিত তার মধ্যে কিছু ভাঙা কলসির টুকরোর মধ্যে তাদের পছন্দ মতন কিছু চিহ্ন আঁকতো। তারপর সেই আঁকা কলসির টুকরো গুলোকে ভালো কলসির মধ্যে ফেলতো। যার পক্ষে বেশি কলসির টুকরো জমা হতো সেই হতো তাদের শাসনকর্তা।

মন্তব্যসমূহ